শ্রাবণ মাস হিন্দু পঞ্জিকায় সবচেয়ে পবিত্র সময় হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে ভগবান শিবের উপাসনার জন্য। এই মাসে ভক্তরা শিবলিঙ্গের জলাভিষেক করেন, ব্রত পালন করেন এবং বিশেষ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলেন। কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে শ্রাবণ মাসে প্রতিদিন ঘরের ঈশান কোণে প্রদীপ জ্বালানোও অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বাস্তু এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে এই সাধারণ उपायটি অনেক ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসে।
ঈশান কোণ কী এবং এটি কেন এত শক্তিশালী
ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণকে ঈশান কোণ বলা হয়। এই দিকটি দেবতাদের দিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং বিশেষভাবে ভগবান শিবের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। বাস্তু শাস্ত্র অনুসারে, এই দিকটি ঘরের শক্তির মূল উৎস। এখানে যদি শুদ্ধতা এবং ইতিবাচক শক্তি বজায় থাকে, তবে ঘরে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসতে শুরু করে।
শিবভক্তি এবং আত্মিক সংযোগের প্রতীক প্রদীপ
ঈশান কোণে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালালে ভগবান শিবের কৃপা লাভ হয়। এই প্রদীপ শিবভক্তি ও সমর্পণের প্রতীক। বিশ্বাস করা হয় যে এর মাধ্যমে সাধকের জীবনের সংকট দূর হতে শুরু করে এবং তার মধ্যে মানসিক শক্তি ও স্থিতিশীলতা আসে। শ্রাবণ মাসে এই সাধনার প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়।
ঘরে আসে লক্ষ্মী, বাড়ে আয়
যখন ঈশান কোণে প্রদীপ জ্বালানো হয়, তখন এটি ঘরের আর্থিক শক্তিকে সক্রিয় করে তোলে। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে, ইতিবাচক ঈশান কোণে প্রদীপের শিখা মহালক্ষ্মীকে আকর্ষণ করে। এর ফলে পুরনো আটকে থাকা কাজগুলি সম্পন্ন হতে শুরু করে, আয়ের নতুন উৎস খুলে যায় এবং ঘরে স্থিতিশীল সমৃদ্ধি আসে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবীদের জন্য এই উপায়ে ভালো লাভ হয়।
পরিবেশে ছড়ায় ইতিবাচকতা এবং মনকে শান্তি এনে দেয়
প্রদীপ থেকে নির্গত আলো এবং তার মধ্যে জ্বলন্ত লবঙ্গ, কর্পূর বা তুলসীর সুগন্ধি ধোঁয়া ঘরের পরিবেশকে পবিত্র ও শক্তিশালী করে তোলে। ঈশান কোণে জ্বলন্ত প্রদীপ ঘর থেকে মানসিক চাপ, কলহ এবং মানসিক চিন্তা দূর করে। এর ফলে পারিবারিক পরিবেশ শান্ত হয় এবং সম্পর্কগুলোতে মাধুর্য আসে।
বাস্তু দোষ প্রশমনের কার্যকরী উপায়
প্রায়শই, ঘরগুলোতে ঈশান কোণে বাথরুম, ভারী আসবাবপত্র বা স্টোররুম থাকে, যা বাস্তু দোষ তৈরি করে। এই দোষ মানসিক চাপ, আর্থিক ক্ষতি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে, প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালালে এই দোষগুলির প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং ইতিবাচক শক্তি পুনরায় সক্রিয় হয়।
সাধনা ও ধ্যানে বিশেষ উপকারিতা
যারা ধ্যান, যোগ এবং মন্ত্র সাধনা করেন, তাদের জন্য ঈশান কোণ সবচেয়ে উপযুক্ত দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দিকের শক্তি সাত্ত্বিক এবং শান্ত। এখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে যদি কেউ "ওঁ নমঃ শিবায়" বা "মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র" জপ করেন, তবে তার প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়। এই উপায় সাধকের মনকে কেন্দ্রীভূত করে এবং তাকে গভীর ধ্যানে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়।
প্রদীপ জ্বালানোর সঠিক পদ্ধতি কী হওয়া উচিত
- সর্বপ্রথম, ঈশান কোণ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এবং সেখানে একটি ছোট চৌকি বা পূজা স্থান তৈরি করুন।
- দেশি ঘি-এর প্রদীপ শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়, যদিও সরিষার তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রদীপে দুটি বাতি দেওয়া শুভ। এছাড়াও একটি লবঙ্গ, কর্পূর বা তুলসী পাতা দেওয়াও খুব উপকারী বলে মনে করা হয়।
- প্রদীপ জ্বালানোর আগে হাত জোড় করে "ওঁ নমঃ শিবায়" উচ্চারণ করুন।
- যদি সম্ভব হয়, তবে প্রদীপ নিভে যাওয়া পর্যন্ত সেখানে বসে শিব মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন।