বাংলায় কথা বলায় পুলিশি ফাঁস! বিপাকে পূর্ব বর্ধমানের ১৬ জন শ্রমিক

বাংলায় কথা বলায় পুলিশি ফাঁস! বিপাকে পূর্ব বর্ধমানের ১৬ জন শ্রমিক
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

বাংলায় কথা বলায় পুলিশি ফাঁস! বিপাকে পূর্ব বর্ধমানের ১৬ জন শ্রমিক

ওড়িশার ঝাড়সুগদা ও বিজয়নগর থানা এলাকার পুলিশ গ্রেফতার করেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার চরসুজাপুর গ্রামের ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে। তাঁদের অপরাধ? বাংলায় কথা বলছেন। পুলিশের সন্দেহ—এঁরা বাংলাদেশি! আর এই অভিযোগেই ঘুম উড়েছে শ্রমিকদের পরিবারগুলির চোখে।

শুধু রুজির জন্য পরিযান, তবু শিকেয় নাগরিক অধিকার

ইদের পরে কাজের খোঁজে ওড়িশা গিয়েছিলেন চরসুজাপুরের প্রায় ১০০ জন শ্রমিক। কিন্তু সেই কর্মযাত্রা যে এভাবে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে, তা কেউ ভাবেননি। গ্রেফতার হওয়া ১৬ জনের মধ্যে এক শ্রমিক কোনওভাবে বাড়িতে খবর দিতে সক্ষম হন। এরপর থেকেই আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে।

নাগরিক হতে প্রমাণ চাই! জন্ম শংসাপত্র থেকে আধার—সব খতিয়ে দেখছে ওড়িশা পুলিশ

পরিবার সূত্রে খবর, গ্রেফতারের পর ওড়িশা পুলিশ শ্রমিকদের কাছ থেকে চাইছে ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত নথি। জন্ম শংসাপত্র, ভোটার কার্ড, আধার—সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেতুগ্রামের মৌগ্রাম পঞ্চায়েতে হাজির হয়েছেন শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মুখে একটাই প্রশ্ন—ভারতের নাগরিক হয়েও প্রমাণ দিতে হবে?

শুধু এই প্রথম নয়, ভাষা পরিচয়ে বারবার বিদ্ধ বাঙালি শ্রমিকরা

এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও বহুবার বাংলায় কথা বলার জন্য ভিন রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হয়েছেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই তোলা হয়েছে প্রশ্ন। অথচ তাঁরা শুধু রুজি-রুটির জন্য দূর রাজ্যে গেছেন, কোনও বেআইনি উদ্দেশ্যে নয়।

'বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি?'—প্রশ্ন তুলছে কেতুগ্রামের পরিবার

চরসুজাপুরের গ্রামবাসীদের মধ্যে ধীরে ধীরে ক্ষোভ জমছে। তাঁদের প্রশ্ন—বাংলা তো ভারতের অন্যতম সরকারি ভাষা! তাহলে বাংলায় কথা বললেই কি বাংলাদেশি হয়ে যাই? এই প্রশ্ন এখন ক্রমেই শাণিত হচ্ছে বাংলার মাটিতে।

মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি, বাড়ি ফেরার আকুতি প্রিয়জনদের

পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার কাঁদছে, দিশাহারা হয়ে ছুটছে প্রশাসনের দ্বারে। কেটেছে রাতের ঘুম, ভোরের অপেক্ষা শুধুই প্রিয়জনদের ফোনের। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। দাবি একটাই—আমাদের ছেলেদের ওড়িশা থেকে ফিরিয়ে আনুন, তাঁরা ভারতীয়—বাংলার সন্তান!

ভাষা বিভাজনের শিকার আর কতদিন?

ভাষা দিয়ে নাগরিকত্ব নির্ধারণের এই প্রবণতা যে কতটা বিপজ্জনক, তা আবারও সামনে এল কেতুগ্রামের ঘটনার মাধ্যমে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ না থাকলে এমন হেনস্থার শিকার ভবিষ্যতেও হতে পারেন বাংলার বহু গরিব পরিযায়ী শ্রমিক। প্রশ্ন উঠছে—এই 'বাংলাভাষী বৈষম্য' আর কতদিন চলবে?

Leave a comment