বিহার নির্বাচনে নীতীশের মাস্টারস্ট্রোক: মহিলাদের মন জয়ে ৭টি বড় প্রকল্পের ঘোষণা

বিহার নির্বাচনে নীতীশের মাস্টারস্ট্রোক: মহিলাদের মন জয়ে ৭টি বড় প্রকল্পের ঘোষণা

বিহার নির্বাচন ২০২৫-এর আগে নীতীশ কুমার মহিলাদের লক্ষ্য করে ৭টি প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাতা বৃদ্ধি, স্বরোজগার, ডিজিটাল সহায়তা এবং आरक्षण। মহিলা ভোটব্যাঙ্ক এবার নির্বাচনী সমীকরণ পরিবর্তন করতে পারে।

বিহার নির্বাচন ২০২৫: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫ যত এগিয়ে আসছে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কৌশল ততই স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি কেবল প্রচারের উপর নির্ভর না করে প্রকল্পগুলিকে বাস্তবে রূপায়নের উপর জোর দিচ্ছেন। বিশেষ করে, মহিলাদের কেন্দ্র করে নতুন প্রকল্প এবং সিদ্ধান্তের ঘোষণা তাঁর রাজনৈতিক কৌশলের একটি বড় অংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নীতীশ তাঁর মহিলা সংলাপে মহিলাদের চাহিদা বুঝেছেন এবং সেই ভিত্তিতে সাতটি বড় ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্পগুলির লক্ষ্য হল মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে নিজেদের দিকে টানা।

সাতটি বড় ঘোষণা যা নির্বাচনী চিত্র পরিবর্তন করতে পারে

গত দুই মাসে নীতীশ কুমার এমন সাতটি ঘোষণা করেছেন যা মহিলাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কর্মসংস্থান, ভাতা বৃদ্ধি, স্বরোজগার এবং आरक्षणের মতো প্রকল্পগুলি মহিলাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী করবে।

১ জীবনিকা দিদিদের জন্য বড় স্বস্তি

গ্রামীণ এলাকার লক্ষ লক্ষ মহিলা জীবনিকা গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত। নীতীশ কুমার ১.৪০ লক্ষ জীবনিকা কর্মীর ভাতা দ্বিগুণ করেছেন। এছাড়াও, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ কেবল মহিলাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে না, বরং গ্রামীণ এলাকায় নীতীশের প্রভাব আরও দৃঢ় করবে।

২ কন্যা বিবাহ মণ্ডপ প্রকল্প

রাজ্য সরকার ৮,০৫৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিবাহ মণ্ডপ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এই মণ্ডপগুলির পরিচালনার দায়িত্ব মহিলাদের দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তাঁরা কর্মসংস্থান এবং সামাজিক অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই প্রকল্পটি মহিলা ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নির্বাচনী দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

৩ আশা এবং মমতা কর্মীদের ভাতা বৃদ্ধি

বিহারের হাজার হাজার মহিলা আশা এবং মমতা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। সম্প্রতি তাঁদের ভাতায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা কর্মীরা এখন ৩,০০০ টাকা এবং মমতা কর্মীরা ৬০০ টাকা পাবেন। এছাড়াও, আশা ফ্যাসিলিটেটরদের ভাতাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১.২০ লক্ষ মহিলা এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত। এদের সবাইকে সুবিধা প্রদান করে নীতীশ একটি বড় মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করেছেন।

৪ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ডিজিটাল সহায়তা

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল কেনার জন্য ১১,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত মহিলাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাথে সংযুক্ত করা এবং তাঁদের প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। নির্বাচনী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই প্রকল্পটি গ্রামীণ মহিলাদের সরাসরি নীতীশের সাথে যুক্ত করে।

৫ মুখ্যমন্ত্রী মহিলা স্বরোজগার প্রকল্প

এটি নীতীশের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি পরিবারের একজন মহিলা ১০,০০০ টাকা অনুদান পাবেন, যা ফেরত দিতে হবে না। যদি মহিলা তাঁর ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, তবে ছয় মাস পর ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণও পাবেন। এর জন্য সরকার ২০,০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করেছে। এই প্রকল্পটি মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নির্বাচনে নীতীশকে বড় সুবিধা এনে দিতে পারে।

৬ স্কুল রাঁধুনিদের ভাতা দ্বিগুণ

স্কুলে কর্মরত রাঁধুনিদের ভাতা ১,৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৩০০ টাকা করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মহিলা কর্মরত। ভাতা বৃদ্ধির ফলে শুধু তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে না, বরং তাঁদের ঝোঁকও নীতীশের দিকে বাড়তে পারে।

৭ মহিলা आरक्षण এবং ডোমিসাইল নীতি

নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত এবং নগর निकायগুলিতে ৫০ শতাংশ মহিলা आरक्षण কার্যকর করেছেন। সরকারি চাকরিতেও ৩৫ শতাংশ आरक्षण মহিলাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, শিক্ষক নিয়োগে ডোমিসাইল নীতি কার্যকর করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি মহিলাদের কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরতা উভয়ই প্রদান করেছে।

মহিলারা কেন নীতীশের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের ভোটের হার পুরুষদের চেয়ে বেশি ছিল। সে সময় ৫৪ শতাংশ পুরুষের তুলনায় ৬০ শতাংশ মহিলা ভোট দিয়েছেন। বর্তমানে বিহারে ৩.৩৯ কোটির বেশি মহিলা ভোটার রয়েছেন। জীবনিকা গোষ্ঠী এবং অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলারা এখন পরিবারে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছেন। এটাই কারণ যে নীতীশ কুমার মহিলাদের কেন্দ্র করে ক্রমাগত প্রকল্প নিয়ে আসছেন।

Leave a comment