কৃষ্ণনগর মর্মান্তিক খুন প্রেমিকা পড়তে যাবে কলকাতায় দূরে চলে যাওয়ার ক্ষোভেই কি গুলি?

কৃষ্ণনগর মর্মান্তিক খুন প্রেমিকা পড়তে যাবে কলকাতায় দূরে চলে যাওয়ার ক্ষোভেই কি গুলি?

বাড়ির ঘরে ঢুকেই মারণ আঘাত

কৃষ্ণনগরের ইশিতা মল্লিকের মৃত্যুতে স্তব্ধ রাজ্য। বাড়ির ঘরে ঢুকে স্কুলপড়ুয়া প্রেমিকাকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করে ১৯ বছরের যুবক দেশরাজ সিং। প্রশ্ন উঠছে—ঠিক কী এমন ক্ষোভে এই চরম পদক্ষেপ? তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন প্রেমের সমীকরণ ও টানাপোড়েনের কাহিনি।

কাঁচরাপাড়ায় আলাপ, প্রেমের সূচনা

ইশিতা মল্লিক পড়াশোনার সুবিধার জন্য পরিবারসহ কাঁচরাপাড়ায় থাকত। বাবা দুলাল মল্লিক প্রাক্তন সেনাকর্মী। কাঁচরাপাড়ার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে করতেই আলাপ হয় উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা দেশরাজ সিং-এর সঙ্গে। তাঁর বাবা ছিলেন NDRF কর্মী। সূত্রের খবর, বন্ধুত্ব থেকে দ্রুত ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছে যায় সম্পর্ক, তৈরি হয় গভীর প্রেম।

একসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক, কিন্তু ভিন্ন পথে চলা

গত বছর একসঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে দু’জন। তবে এরপরেই পথ আলাদা হতে শুরু করে। ইশিতা কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে কলেজে ভর্তি হয়। অপরদিকে দেশরাজ ম্যানেজমেন্ট পড়তে গিয়েও মাঝপথে ছেড়ে দেয় পড়াশোনা। স্কুল শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের দেখা-সাক্ষাৎ কমতে শুরু করে। সম্পর্কেও নেমে আসে টানাপোড়েন।

সম্পর্কে ভাঙন, নাছোড়বান্দা দেশরাজ

ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইশিতা ধীরে ধীরে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কিন্তু দেশরাজ মানতে পারছিল না। দূরত্ব যত বাড়ছিল, ততই সন্দেহ ও রাগ জমতে থাকে। লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপের ধারণা মেনে নিতে পারেনি সে, এমনটাই অনুমান তদন্তকারীদের।

কলকাতায় ল’ পড়তে যাচ্ছিল ইশিতা

পরিবারের স্বপ্ন ছিল ইশিতাকে ল’কলেজে ভর্তি করানোর। ইতিমধ্যেই ফর্ম ফিল-আপও হয়ে গিয়েছিল। সোমবার বাবা-মেয়ের কলকাতা আসার কথা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে একদিন পিছিয়ে যায় সফর। কিন্তু এই খবর যেন আরও ক্ষোভে আগুন ঢালে দেশরাজের মনে। প্রেমিকা দূরে চলে যাবে—এই আতঙ্কই কি রূপ নেয় হিংস্রতায়?

শিউরে ওঠা হত্যাকাণ্ড

পুলিশ সূত্রে খবর, পরিকল্পনা করে ইশিতার কৃষ্ণনগরের বাড়িতে ঢোকে দেশরাজ। কথা-কাটাকাটি চলাকালীন মুহূর্তের মধ্যে বের করে আনে আগ্নেয়াস্ত্র এবং পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে তরুণী। পরিবারের চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য স্তম্ভিত করে দেয় প্রতিবেশীদেরও।

তদন্তে পুলিশের সন্দেহ

পুলিশ দেশরাজকে গ্রেফতার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিক অনুমান, সম্পর্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত এবং কলকাতায় পড়াশোনার জন্য দূরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাই হত্যার নেপথ্যে। তবে এর পেছনে অন্য কোনও প্ররোচনা বা পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীরা বন্ধু ও পরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলছেন।

রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য

এক স্কুলছাত্রীর এমন মৃত্যুতে শোক ছড়িয়েছে সর্বত্র। প্রশ্ন উঠছে তরুণ প্রজন্মের মানসিকতা নিয়ে। প্রেম ভাঙার ক্ষোভ যে এত ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে, তা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্ক ভাঙন ও মানসিক চাপ সামলাতে ব্যর্থতাই অনেক সময় তরুণদের এমন পথে ঠেলে দেয়।

সমাজের সামনে বড় প্রশ্ন

কৃষ্ণনগরের এই ঘটনার পর আলোচনায় উঠছে মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক ভাঙার পর কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজনীয়তা। শুধু আইন নয়, সামাজিক কাঠামোতেও প্রশ্ন উঠছে—তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্থিতি কিভাবে সুস্থ রাখা যায়। পুলিশ তদন্তে আসল কারণ সামনে আনলেও, ঘটনাটি সমাজকে দীর্ঘদিন তাড়া করবে।

Leave a comment