মণ্ডপে জল, আটকে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা: টানা বর্ষণে কলকাতা ও শহরতলির বহু পুজোমণ্ডপ এখনও জলমগ্ন। কোথাও আবার মণ্ডপ শুকনো থাকলেও মাঠে জমে রয়েছে হাঁটু–সমান জল। তৃতীয়াতেও মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছানো যায়নি। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আবহাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা দ্বিধায় রয়েছেন।
কুমোরটুলিতে আটকে রয়েছে ডজন–ডজন প্রতিমা
অতি বর্ষণের প্রভাব এসে পৌঁছেছে কুমোরটুলিতেও। বহু স্টুডিয়োতে এখনও প্রতিমা পড়ে রয়েছে। শিল্পীরা দুশ্চিন্তায়— যদি ফের বৃষ্টি হয়, তবে প্রতিমা কীভাবে রক্ষা করবেন? এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিমার রং নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার কয়েক ঘণ্টার রোদে শিল্পীরা সেগুলি মেরামতির চেষ্টা করেছেন।
শিল্পীদের চোখে অনিশ্চয়তার ছবি
শিল্পী বিশ্বনাথ পালের স্টুডিয়োতে এখনও ১৩টি প্রতিমা পড়ে। মঙ্গল–বুধবারের মধ্যে সব মণ্ডপে পৌঁছানোর কথা থাকলেও উদ্যোক্তারা আসতে পারেননি। তিনি জানান, “সবই অর্ডারি প্রতিমা। দুর্যোগে কেউ আসতে পারেননি। তবে সবাই বলেছেন দু’-একদিনে নিয়ে যাবেন।আর এক শিল্পী বলেন, “আমার ছ’টি প্রতিমা আটকে আছে। কেউ বলছেন মণ্ডপে জল, কেউ আবার বলছেন মণ্ডপ সারাতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই প্রতিমা নিয়ে যাবেন।
অর্থনৈতিক ধাক্কায় কাঁপছেন মৃৎশিল্পীরা
শিল্পী রতন পালের আশঙ্কা আরও গুরুতর। তাঁর কথায়, “আমার গ্রাহকদের অনেকের ছোট পুজো। জল ও বৃষ্টিতে তাঁদের মণ্ডপ ভেস্তে গিয়েছে। যদি ফের বৃষ্টি হয়, তাঁরা হয়তো প্রতিমা নিতে পারবেন না। বায়না করা প্রতিমা বিক্রি না হলে আমি লোকসানে ডুবব।” সারা বছরের খাটনিই জলে ভেসে যাওয়ার ভয় ঘিরে ধরছে কুমোরটুলির শিল্পীদের।
ক্ষতির ছবি আরও প্রকট হচ্ছে
অনেক স্টুডিয়োতেই প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও প্রতিমার রং ধুয়ে মাটিতে মিশে গেছে, কারও আবার স্টুডিয়োর গেটে রাখা প্রতিমা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন আর সেগুলি বিক্রি করা সম্ভব নয়। কয়েক লক্ষ টাকা লোকসানের মুখে শিল্পীরা।
উদ্যোক্তাদেরও আতঙ্ক, তবু পুজো হবেই
দক্ষিণ কলকাতার কসবার রূপমঞ্জরী পুজোর উদ্যোক্তা রক্তিম চক্রবর্তী বলেন, “মণ্ডপে জল দাঁড়িয়ে আছে। বৃহস্পতিবার যদি বৃষ্টি না হয়, জল নেমে যাবে। তবে প্রতিমা আনতে পারিনি। তবু পুজো করব। যদি প্রতিমা না আসে, ঘটপুজো হবে। কিন্তু শিল্পীর পাওনা টাকা আমরা মিটিয়ে দেব।”
হাওয়া অফিসের নতুন সতর্কবার্তা
শিল্পীরা স্বস্তি খুঁজছিলেন রোদের ফাঁকেই। কিন্তু হাওয়া অফিস ফের জানিয়ে দিয়েছে, নতুন নিম্নচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার ফের অঝোরে বৃষ্টি নামলে প্রতিমা আনা–নেওয়ার কাজ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে শিল্পী থেকে উদ্যোক্তা— সকলেেরই।
শহরে পুজোর আমেজ পৌঁছে গেলেও প্রতিমা প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনো জারি। জলমগ্ন মণ্ডপ, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমা, উদ্যোক্তাদের দুশ্চিন্তা আর শিল্পীদের লোকসান— সব মিলিয়ে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের আগে উদ্বেগের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে।