ভাষা বিতর্ক: রাহুল গান্ধী ও অমিত শাহের ভিন্ন মেরুর অবস্থান

ভাষা বিতর্ক: রাহুল গান্ধী ও অমিত শাহের ভিন্ন মেরুর অবস্থান

রাহুল গান্ধী সংসদে ইংরেজিকে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা বলেছেন এবং বলেছেন এটি উন্নতির মাধ্যম। অমিত শাহ ভারতীয় ভাষার সমর্থন করে ইংরেজি ভাষীদের লজ্জা পাওয়ার কথা বলেছেন। এই বিতর্ক ভাষা থেকে সুযোগ এবং সমতার প্রশ্নটিকে সামনে আনছে।

রাহুল গান্ধী: ভারতে ভাষা নিয়ে বিতর্ক এখন আরও তীব্র হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বিবৃতি যে 'এই দেশে ইংরেজি ভাষীদের লজ্জা আসবে', এর জবাবে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ইংরেজিকে ভারতের 'সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা' বলেছেন। রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে ভাষা আবারও রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠছে।

ভাষা ও রাজনীতি: পুরনো ইস্যু, নতুন মোড়

ভারতবর্ষের মতো বহুভাষী দেশে ভাষাগত পরিচিতি ও ঐতিহ্য কোনো নতুন বিষয় নয়। প্রতিটি রাজ্য তাদের ভাষাকে গর্বের বিষয় মনে করে। এমন পরিস্থিতিতে যখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাহুল গান্ধীর মতো প্রবীণ নেতারা ভাষা নিয়ে তাদের মতামত রাখেন, তখন এই বিষয়টি রাজনীতির পাশাপাশি সমাজে প্রতিধ্বনিত হয়।

রাহুল গান্ধীর বক্তব্য: 'ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী'

লোকসভায় ভাষণের সময় রাহুল গান্ধী সরাসরি বলেন যে ভারতে উন্নতির পথ আজ ইংরেজির মাধ্যমেই যায়। তিনি মনে করেন যে হিন্দি এবং আঞ্চলিক ভাষাগুলির নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, তবে ইংরেজি শিক্ষা আজও সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং এটিই ভারতে সুযোগের চাবিকাঠি।

রাহুল বলেন, 'আমি এটা বলছি না যে হিন্দি বা তামিল, কন্নড়, বাংলার মতো ভাষা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এগুলো আমাদের সংস্কৃতির আত্মা। কিন্তু বাস্তবতা হল, আজ ইংরেজি শিক্ষা ভারতে যেকোনো আঞ্চলিক ভাষার চেয়ে বেশি সুযোগ দেয়। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য।'

বিজেপি নেতাদের নিশানা

রাহুল গান্ধী বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন করেন যে যারা ইংরেজিকে সরানোর কথা বলেন, তারা নিজের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কেন পাঠান? 'যদি ইংরেজি ভুল হয়, তাহলে আপনার বাচ্চারা সরকারি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে কেন পড়ে না?' এই প্রশ্ন সরাসরি বিজেপি নেতাদের কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে।

অমিত শাহের আবেগপূর্ণ আবেদন: 'হিন্দি, ভারতীয় ভাষার সখী'

অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় ইংরেজির ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'আমার কথা মনে রাখবেন, এমন একটি সমাজ এখন দূরে নয় যেখানে ইংরেজি ভাষীদের লজ্জা আসবে। ভারতীয় ভাষা ছাড়া আমরা ভারতীয় থাকতে পারব না।' শাহ আরও বলেন যে ভারতের আত্মা, ইতিহাস, ধর্ম ও সংস্কৃতি কোনো বিদেশি ভাষা বুঝতে পারবে না। 'ভারতের কল্পনা শুধুমাত্র ভারতীয় ভাষা ও ভারতীয়ত্ব দিয়েই সম্ভব।'

বিতর্কের মূল বিষয়: শিক্ষা ও সমান সুযোগ

এই বিতর্কের আসল প্রশ্ন হল ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজি এমন একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা ধনী ও গরিবের মধ্যে একটি বড় ব্যবধান তৈরি করছে। শহরে বসবাসকারী এবং ভালো আর্থিক অবস্থার শিশুরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে ভালো ক্যারিয়ার তৈরি করে, যেখানে গ্রামীণ বা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুরা হিন্দি বা আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশোনা করে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যায়। রাহুল গান্ধী এই ব্যবধান দূর করার কথা বলছেন, যেখানে অমিত শাহ ভারতীয় ভাষার ঐতিহ্যকে সর্বোচ্চ মনে করেন।

সমাধান কী হতে পারে?

ভারতের এমন একটি শিক্ষা নীতি প্রয়োজন যা ভাষাগত ভারসাম্য বজায় রাখে। শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় শক্তিশালী ভিত্তি দেওয়া উচিত, তবে একই সাথে ইংরেজি ভাষার মতো একটি বিশ্বব্যাপী ভাষার জ্ঞানও দেওয়া উচিত যাতে তারা বিশ্ব স্তরে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এছাড়াও, এটিও জরুরি যে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে কেবল আবেগপূর্ণ বিষয় হিসাবে না দেখে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসাবেও গ্রহণ করা উচিত।

Leave a comment