মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ তাদের সাম্প্রতিক নির্দেশে বিচার ব্যবস্থার অভ্যন্তরে বিদ্যমান বৈষম্য এবং মানসিকতা নিয়ে গুরুতর এবং চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছে।
ভোপাল: মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি দেওয়া এক রায়ে দেশের বিচার ব্যবস্থার অভ্যন্তরে বিরাজমান ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা এবং শ্রেণীবদ্ধ মানসিকতা নিয়ে অত্যন্ত তীব্র এবং ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছে। আদালত হাইকোর্ট এবং জেলা আদালতগুলির মধ্যে সম্পর্ককে "সামন্ত এবং ক্রীতদাস"-এর মতো বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে এই সম্পর্ক ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
পুরো বিষয়টি কী?
এই মামলাটি বিশেষ বিচারক জগৎ মোহন চতুর্বেদীর সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি ২০১৬ সালে ভোপাল জেলা আদালতে SC/ST আইনের বিশেষ বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালে, তিনি ব্যাপম কেলেঙ্কারির কয়েকজন অভিযুক্তকে আগাম জামিন মঞ্জুর করেছিলেন, যেখানে একই মামলার অন্য অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলির কারণে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয় এবং তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
আবেদনকারী বিচারক তার বিরুদ্ধে করা এই পদক্ষেপকে অন্যায় বলে হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন। এই পিটিশনের শুনানির সময় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ভারতীয় বিচার বিভাগের কাঠামোর মধ্যে বিরাজমান উঁচু-নিচু স্তরের আচরণের বিষয়ে গভীর মন্তব্য করেছে।
হাইকোর্টের তীব্র মন্তব্য
আদালত বলেছে যে হাইকোর্ট এবং জেলা আদালতগুলির মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে এক প্রকার সামন্ততান্ত্রিক আচরণ বিদ্যমান, যা বিচারকদের আত্মসম্মান এবং নিরপেক্ষতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আদালত মন্তব্য করেছে: হাইকোর্টের বিচারকরা নিজেদেরকে 'সবর্ণ' এবং জেলা বিচারকদেরকে 'শূদ্র' মনে করেন। এই জাতিগত মানসিকতা বিচার ব্যবস্থাতেও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
আদালত জেলা বিচারকদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়েও তীব্র বিদ্রূপ করেছে: যখন জেলা বিচারকরা হাইকোর্টের বিচারকদের সাথে দেখা করেন, তখন তাদের শারীরিক ভাষা এমন হয় যেন মেরুদণ্ডহীন স্তন্যপায়ী প্রাণী কারো সামনে অনুনয় করছে।
ব্যবহারিক বৈষম্য এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ
আদালত আরও বলেছে যে অনেক সময় রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম বা অন্যান্য পাবলিক প্লেসে জেলা বিচারকদের হাইকোর্টের বিচারকদের অভ্যর্থনা জানাতে দেখা যায় এবং হাইকোর্টের রেজিস্ট্রিতে মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও তাদের বসার অনুমতিও দেওয়া হয় না। এই ধরনের আচরণ জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মগ্লানি এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে।
এই পুরো ব্যবস্থা জেলা বিচার বিভাগকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের রায়েও প্রতিফলিত হয়। আদালত এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এই ধরনের বৈষম্যমূলক কাঠামোর কারণে জেলা বিচারকরা অনেক সময় নির্দোষ লোকদের মুক্তি দিতে দ্বিধা বোধ করেন। আদালত বলেছে: বড় মামলায় বিচারকরা খালাস বা জামিন দেওয়া থেকে বিরত থাকেন কারণ তাদের ভয় থাকে যে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
আদালতের আদেশ
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট বিচারপতি চতুর্বেদীর সাথে করা পদক্ষেপকে অন্যায় বলে অভিহিত করে তাকে:
- চাকরি থেকে বরখাস্তের তারিখ থেকে অবসর পর্যন্ত বকেয়া বেতন
- ৭% সুদসহ পেনশন সুবিধা
- এবং ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই রায় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার প্রদান করে না, বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য সচেতনতারও সূচনা করে। এই রায় ভারতীয় বিচার বিভাগের জন্য একটি আত্মসমীক্ষার সুযোগ।