ফুসফুসের ক্যান্সার একটি গুরুতর এবং প্রাণঘাতী রোগ, যা প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক লক্ষণ দেয়। যদি এই লক্ষণগুলি সময়মতো শনাক্ত করা হয় এবং সঠিক চিকিৎসা পরীক্ষা করানো হয়, তবে রোগের তীব্রতা অনেকটাই কমানো সম্ভব। এর জন্য এটি জরুরি যে মানুষ তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিক এবং কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে হালকাভাবে না নিক।
Lung Cancer: ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রায়শই ধীরে ধীরে দেখা যায় এবং কখনও কখনও সাধারণ সর্দি-কাশি বা অন্যান্য হালকা রোগের মতো মনে হয়। প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বারবার ফুসফুসের সংক্রমণ, স্বরের পরিবর্তন, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, রক্তযুক্ত কফ, ক্ষুধা কমে যাওয়া, ওজন হ্রাস, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুক এবং পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা। এই লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
বারবার ফুসফুসের সংক্রমণ
ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল বারবার সংক্রমণ। এমন ব্যক্তিরা প্রায়শই ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হন। বারবার সংক্রমণ হওয়ার কারণে ফুসফুসের আশেপাশে অবস্থিত লিম্ফ নোডগুলিতে ফোলা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, ক্রমাগত কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং কফ আসার মতো সমস্যাও দেখা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই লক্ষণটি ফুসফুসে কোনো গুরুতর সমস্যার প্রাথমিক সতর্কীকরণ সংকেত হতে পারে, সুতরাং এটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
স্বরের পরিবর্তন
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বরের পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে। এই পরিবর্তন প্রায়শই লিম্ফ নোড বা ভোকাল কর্ডের উপর প্রভাব ফেলার কারণে ঘটে। স্বরে ভারী ভাব, কর্কশতা, বা হঠাৎ স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় মানুষ এটিকে সাধারণ ক্লান্তি বা সর্দি-কাশির কারণে হওয়া পরিবর্তন মনে করে, কিন্তু যদি এটি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করানো জরুরি।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি
ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি প্রধান লক্ষণ হল দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমাগত কাশি হওয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে এই কাশি কফবিহীন হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে কাশির সাথে রক্ত বা মরিচার রঙের কফও আসতে শুরু করে। অনেক সময় রোগীর বারবার গলা পরিষ্কার করার প্রয়োজন অনুভব হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে দীর্ঘ সময় ধরে কাশি হওয়া সবসময় ফুসফুসের কোনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে এবং এটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং ওজন হ্রাস
ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণে ব্যক্তির ক্ষুধা কমে যায়। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানের শোষণ হয় না, যার ফলে দুর্বলতা বাড়তে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ ওজনও কমে যায়। এই ওজন হ্রাস সাধারণ দুর্বলতা থেকে ভিন্ন হয় এবং ক্রমাগত ওজন হ্রাসকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণটি রোগ শনাক্তকরণে সহায়তা করতে পারে।
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
ফুসফুসে ক্যান্সার বাড়লে ব্যক্তির শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব হতে শুরু করে। হালকা দৌড়ানো, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা বা সাধারণ কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট এর লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থা শরীরে অক্সিজেনের অভাব এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে। প্রাথমিক পর্যায়েও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
বুক এবং পিঠে ব্যথা
অনেক সময় ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে বুক এবং পিঠে ক্রমাগত ব্যথা অনুভব হতে পারে। এই ব্যথা বিশেষ করে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ঘুমানোর সময় বা ভারী কাজ করার সময় বাড়তে পারে। ব্যথার সাথে কখনও কখনও চাপ বা অস্বস্তির অনুভূতিও থাকে। এই ধরনের ব্যথাকে প্রায়শই সাধারণ ক্লান্তি বা পেশীর সমস্যা মনে করা হয়, কিন্তু ক্রমাগত বাড়তে থাকা ব্যথাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়শই কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন। এটি শক্তির অভাব এবং শরীরে পুষ্টির অভাবের কারণে ঘটে। ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা ফুসফুসের গুরুতর সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। যদি এটি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।