বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী
বোলপুরের শান্তিনিকেতন হাটতলা থেকে শুরু হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পদযাত্রা। বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি সম্প্রদায়ের উপরে ‘সংস্কৃতি ধ্বংসের’ চেষ্টা, বাংলা ভাষার প্রতি ‘অবজ্ঞা’ এবং বাঙালিদের উপর ‘আক্রমণের’ প্রতিবাদেই এই কর্মসূচি বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের মিছিলে মমতার হাতে ছিল প্রতীকী ‘বাংলা বর্ণমালা’। বাঙালি সংস্কৃতির এই প্রতীক দিয়ে তিনি যেন এক প্রকার মৌন প্রতিবাদ জানালেন ‘বহিরাগত রাজনীতি’-র বিরুদ্ধে।
রবীন্দ্রনাথের ছবি হাতে বাংলা সংস্কৃতির বার্তা দিলেন নেত্রী
পদযাত্রার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন দিক ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় একটি ছবি—যা মিছিলে বহন করছিলেন একদল যুবক-যুবতী। বাংলার অহংকার, বিশ্বকবির প্রতিমূর্তি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেন বুঝিয়ে দিলেন, বাংলার সংস্কৃতি কোনও দল বা মত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং সেটি সার্বজনীন। এও ছিল এক ধরনের কূটনৈতিক বার্তা—যেখানে বাংলার আবেগ, চেতনা ও সাহিত্যের মহিমা তুলে ধরলেন রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষায়।
শান্তিনিকেতনের মাটি থেকেই জোরালো বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী
মিছিল শুরু হওয়ার আগে শান্তিনিকেতনের হাটতলায় এক ছোট সভায় বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যারা বাংলা ভাষা বোঝে না, তারাই আজ বাংলাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা বাংলা সংস্কৃতি, ভাষা ও ইতিহাসের রক্ষক হিসেবে প্রতিবাদ করতে জানি।” এই বার্তার মাধ্যমে তিনি ফের একবার কেন্দ্রীয় শাসকের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেন এবং একুশে নির্বাচনের আগে আবারও ‘বাঙালি চেতনা’ জাগানোর কৌশলকে সামনে আনলেন।
স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তৃণমূলের মনোবল চাঙ্গা
এদিনের পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষত, বোলপুর-বীরভূমের গ্রামাঞ্চল থেকে বহু মানুষ এসে যোগ দেন এই কর্মসূচিতে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও বর্ণমালা হাতে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এতে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের আত্মবিশ্বাস ফের চাঙ্গা হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মিছিল শেষে স্থানীয় স্তরের কয়েকজন তৃণমূল নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
বিজেপিকে তোপ, “বাংলা ভাষা অপমান করলে, চুপ করে থাকব না” বার্তা মমতার
মিছিল শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একবার কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করলে, আমি মুখ বুঁজে থাকব না। আজকের মিছিল বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার বার্তা। তিনি আরও বলেন, বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে যারা বাংলাকে অপমান করে, তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে গণতান্ত্রিক পথে। এই বক্তব্যেই তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন—আগামী দিনে তাঁর লড়াই কেবলমাত্র রাজনৈতিক নয়, তা সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের লড়াইও বটে।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, তৃণমূলের নতুন ভোট কৌশল কি বাঙালি আবেগ?
বীরভূমে তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে অনেকেই ভোট কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন। বাংলা সংস্কৃতিকে সামনে রেখে মমতা আবারও বাঙালি আবেগ জাগানোর চেষ্টা করছেন বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল যে বিজেপির বিরুদ্ধে সংস্কৃতি-ভিত্তিক রাজনৈতিক সুর চড়াতে চাইছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে এদিনের পদযাত্রা থেকে।