দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় টানা বর্ষণে জল জমেছে বিস্তীর্ণ চাষের জমিতে। এর জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিজ ফসল। সেই ক্ষতির প্রতিফলন পড়েছে সরাসরি জেলার সবজি বাজারে। প্রয়োজনের তুলনায় যোগান কম হওয়ায় আগুন দাম শাক-সবজিতে। একদিকে বাজারে লঙ্কার ঝাঁঝ, অন্যদিকে পকেট ফাঁকা মধ্যবিত্তের। দিনে দিনে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে অনেকেই প্রয়োজনীয় সবজিও কম পরিমাণে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
লঙ্কায় আগুন! ১০০ গ্রাম ২০ টাকা, বেগুনে ছুঁল শতক
এক সবজি বিক্রেতা জানালেন, “ক’দিন আগেই ১০০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কা বিকোত ১০ টাকায়। এখন সেই দাম দ্বিগুণ!” বেগুনের ক্ষেত্রে তো রীতিমতো দামি মাছের পাল্লা দিচ্ছে। দু’সপ্তাহ আগেও বেগুনের দাম যেখানে ছিল ৫০-৬০ টাকার মধ্যে, এখন তা পৌঁছে গিয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে। জেলায় অনেক জায়গায় বেগুনের দাম ১০০ টাকার নিচে মিলছেই না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
পেঁয়াজ-আলু থেকে পটল-টোম্যাটো, সর্বত্র একই হাল
শুধু বেগুন নয়, বিপর্যস্ত অন্যান্য সবজিও। পটল, টোম্যাটো, আলু, পেঁয়াজ—সব কিছুর দাম লাফিয়ে বেড়েছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টিতে জমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসল তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তার ওপর পরিবহণ সমস্যাও যোগ হয়েছে। বাজারে যা অল্প পরিমাণে সবজি আসছে, তাও দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিক্রেতারা বাধ্য হয়ে বলছেন, "অল্প করে দিন, যা দাম!" অথচ সাধারণ মানুষ চায় ন্যায্য দামে প্রয়োজনীয় রসদ।
‘গরিবের ভরসা’ পটলও খেলছে ব্যাটিং!
একসময় পটল ছিল গরিব-মধ্যবিত্ত পরিবারের নিত্যসঙ্গী। অথচ এখন সেই পটলের দামও হয়ে গিয়েছে ‘এলিট ক্লাস’-এর মতন। ক’দিন আগেও ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পটল এখন ৭০-৮০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। এমন অবস্থায় নিত্যদিনের রান্নার বাজেট করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গৃহিণীরা। শুধু পটল নয়, ঝিঙে, বিনস, টোম্যাটো—সব মিলিয়ে বাজারে যেন এক অঘোষিত অগ্নিকাণ্ড!
টোম্যাটো কিনতে কালঘাম, মাংস রান্নাও পড়ছে ধাক্কায়
বাংলার বহু পরিবারের রোববার মানেই মাংস রান্না। আর সেই মাংসের সঙ্গী টোম্যাটো না হলে যেন রান্নাই অসম্পূর্ণ। অথচ এখন সেই টোম্যাটো কিনতেই ঘাম ঝরছে। একদিকে অতিরিক্ত দাম, অন্যদিকে অপ্রতুল সরবরাহ—এই দুইয়ে মিশে টোম্যাটোর দাম পৌঁছে গিয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙে, বিনসও। জেলার প্রতিটি হাটবাজারে একই চিত্র—অসহায় ক্রেতা, দিশেহারা বিক্রেতা।
সবজির বদলে ডিম-সয়াবিনে মন
বাজারে সবজির দাম শুনে অনেকেই এবার ফিরছেন বিকল্প দিকে। ডিম, সয়াবিন, মুসুর ডাল—এইসব এখন অনেকের কাছে সস্তা এবং কার্যকর বিকল্প হয়ে উঠেছে। এই বাজারে বিনসের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছেছে। অথচ মাস খানেক আগেও এই সবজি পাওয়া যেত ৫০-৬০ টাকায়। এমন অবস্থায় অনেক গৃহবধূ বলছেন, সবজি বাদ, ডিম দিয়েই চালাতে হবে রান্না!
ঢ্যাঁড়সেও ছ্যাঁকা! সাধারণ মানুষ কার্যত দিশেহারা
একসময় যে ঢ্যাঁড়স ২০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এখন বিকোচ্ছে ৪০ টাকায়। কিছু বাজারে সেই দাম পৌঁছেছে ৫০ টাকাতেও। সামগ্রিকভাবে বাজারের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই কপালে চিন্তার ভাঁজ। “কোনটা কিনব, কোনটা ছাড়ব বুঝতে পারছি না”—বলছেন এক প্রবীণ ক্রেতা। বাজারে লঙ্কার ঝাঁঝে আর কাঁচা আনাজের দামে কার্যত জ্বলছে দক্ষিণবঙ্গের মধ্যবিত্ত শ্রেণি।