২০২৪-র লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে রাজনৈতিক জমি অনেকটাই শক্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কোচবিহার আসনে জয়, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে ব্যবধান কম—সব মিলিয়ে ঘাসফুল শিবির বুঝে গিয়েছে, পাহাড় আর প্লেনের ভোটবাক্সেই রয়েছে ভবিষ্যতের খেলা। তাই ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশে তৃণমূলের মূল লক্ষ্য এখন উত্তরের জেলা। ধর্মতলায় এবারের মঞ্চ হয়ে উঠছে সেই উত্তরের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রধান ক্ষেত্র।
ট্রেন-বাসে ঢল নামবে নেতা-কর্মীর, ধর্মতলায় হবে রেকর্ড জমায়েত
জেলার ব্লক স্তর থেকে তৃণমূল কর্মীরা আসছেন ট্রেনে, বাসে, এমনকি ট্রাকে চেপে। শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ—উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলা থেকে ধর্মতলা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন হাজার হাজার কর্মী। দলীয় সূত্রে খবর, এবারের জমায়েত হবে বিগত সমস্ত বছরের রেকর্ড ভেঙে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, লোকসভা ভোটে উত্তরের জমি শক্ত করার ফলেই এই সমাবেশে আগ্রহ আরও বেড়েছে।
বিজেপির জমিতে ঘাসফুল বোনার চেষ্টা, তাই ‘পাখির চোখ’ উত্তরবঙ্গ
২০২৬-র বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। আর সেই প্রস্তুতির মূল অক্ষর এখন ‘উত্তরবঙ্গ’। তৃণমূলের লক্ষ্য কোচবিহার, চা-বলয় এলাকা, রাজবংশী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো। এখানেই বিজেপির সাংগঠনিক দাপট ছিল দীর্ঘদিন। তবে এবার ব্লকভিত্তিক সংগঠন গড়ে সেই দাপটের ঘুঁটি পাল্টে দিতে চাইছে শাসক শিবির। ফলে শহিদ দিবসের সমাবেশ হয়ে উঠছে উত্তরবঙ্গের জনসমর্থন যাচাইয়ের মঞ্চ।
পাহাড়ে সঙ্গী প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা, নতুন রাজনৈতিক রসায়নে চমক
তৃণমূল কংগ্রেসের এই মহা সমাবেশে এবার একাধিক মোর্চার নেতাও থাকছেন। অনীত থাপার নেতৃত্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতারাও অংশ নেবেন শহিদ দিবসের মঞ্চে। পাহাড়ে সংগঠন গড়েই তৃণমূল সেখানে রাজ্যসভার সাংসদ পাঠাতে পেরেছে—এই বার্তাও ধর্মতলা থেকে দিতে চায় দল। চা-বাগান শ্রমিক, আদিবাসী সম্প্রদায়—সবকিছু মিলিয়ে এবার উত্তরবঙ্গের ভোট-সমীকরণ নতুন মোড় নিতে চলেছে।
পাল্টা পথে বিজেপি, উত্তরকন্যা অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হবে রাজনৈতিক আবহ
একদিকে ধর্মতলায় মহাসমাবেশ, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান। বিজেপির পাল্টা কর্মসূচি শাসক দলের জমায়েতে ছায়া ফেলবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সভা করেছেন কিছুদিন আগে। বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছে, উত্তরবঙ্গ এখনও তাদের ‘গড়’। সেই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৃণমূল চাইছে রাস্তার রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের শক্তি দেখাতে।
তিন স্তরবিশিষ্ট মঞ্চ, ৬০০ জনের বসার ব্যবস্থা, নজরকাড়া প্রস্তুতি
২১ জুলাইয়ের মঞ্চ এবার শুধু বক্তব্য নয়, হয়ে উঠছে সাংগঠনিক শক্তির প্রদর্শনী। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৈরি হচ্ছে তিনটি বিশাল মঞ্চ। মূল মঞ্চের উচ্চতা ১১, ১২ ও ১৩ ফুট, দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট। প্রায় ৬০০ নেতাকর্মী বসতে পারবেন সেখানে। দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকার রঙে মঞ্চ সজ্জিত হবে। বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও খোলা আকাশের নিচেই হবে পুরো অনুষ্ঠান।
শহরে ১৫টি জায়ান্ট স্ক্রিন, স্বেচ্ছাসেবকের নজরদারি
শুধু মাঠ নয়, শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে তৃণমূলের বার্তা। এসপ্ল্যানেড, পার্কস্ট্রিট, চৌরঙ্গির মতো জনবহুল এলাকায় থাকছে ১৫টি জায়ান্ট স্ক্রিন। সেগুলিতে সরাসরি সম্প্রচার হবে সভার। নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় থাকবেন ১০০০-এরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক। তিনটি মঞ্চের একটিতে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শীর্ষ নেতৃত্ব, একটিতে শহিদ পরিবার, তৃতীয়টিতে জনপ্রতিনিধিরা।
শুধু শ্রদ্ধা নয়, ২১ জুলাই রাজনৈতিক মহাযুদ্ধের সূচনা!
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা অনুযায়ী, এবারের ২১ জুলাই শুধুমাত্র শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নয়। বরং ২০২৬-র লক্ষ্যে পৌঁছনোর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা। তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট, উত্তরবঙ্গেই এবার জয়-পরাজয়ের রূপরেখা আঁকা হবে। আর সেই লক্ষ্যেই উত্তরের শাসনভূমি ছুঁয়ে ধর্মতলায় উঠছে শঙ্খধ্বনি।