মেট্রো ইন দিনো: অনুরাগ বসুর মাস্টারপিস যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়

মেট্রো ইন দিনো: অনুরাগ বসুর মাস্টারপিস যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়

আমরা প্রায়ই বলি না যে, এমন সিনেমা কেন তৈরি হয় না যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়, যা বছরের পর বছর মনে থাকে? তাহলে শুনুন, অনুরাগ বসু তেমনই একটি মাস্টারপিস সিনেমা বানিয়েছেন। এই সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং আরোগ্য করারও কাজ করবে।

  • পর্যালোচনা: মেট্রো ইন দিনো
  • তারিখ: ০৪-০৭-২৫ 
  • ভাষা: হিন্দি 
  • পরিচালক: অনুরাগ বাসু
  • অভিনয়ে: সারা আলি খান, আদিত্য রায় কাপুর, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, কনকনা সেন শর্মা, নীনা গুপ্তা, অনুপম খের, আলি ফজল এবং ফাতিমা সানা শেখ
  • প্ল্যাটফর্ম: সিনেমা হল
  • রেটিং: ৪/৫

Metro In Dino: যদি আপনিও সেই দর্শকদের মধ্যে একজন হন যারা সিনেমায় আবেগ, সম্পর্ক এবং গভীরতা মিস করছিলেন, তাহলে অনুরাগ বসুর ‘মেট্রো ইন দিনো’ আপনার জন্য কোনও ট্রিটমেন্টের চেয়ে কম কিছু নয়। ৪ জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার রিভিউ দেখে বলা যেতে পারে যে, এই সিনেমাটি আপনাকে শুধু আনন্দই দেয় না, বরং ভেতর থেকে শান্তিও এনে দেয়। অনুরাগ বসু আরও একবার প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের অনুভূতি এবং জটিল সম্পর্কগুলিকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি নেই।

গল্পের বহু স্তর, প্রতিটি সম্পর্কের সত্য উন্মোচন

সিনেমাটিতে একসঙ্গে অনেকগুলি গল্প বোনা হয়েছে, যা একটি থেকে আলাদা হলেও কোথাও না কোথাও হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত। পঙ্কজ ত্রিপাঠী এবং কনকনা সেন শর্মার চরিত্রটি বিয়ের বছর কাটানোর পর একঘেয়েমি অনুভব করে। তাঁদের মেয়ে নিজের যৌন পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে, আলি ফজল এবং ফাতিমা সানা শেখ লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপে (দূরত্ব সম্পর্ক) ক্যারিয়ার এবং ভালোবাসার টানাপোড়েনে জর্জরিত। আদিত্য রায় কাপুরের উচ্ছল চরিত্র, আগে থেকেই ভেঙে যাওয়া হৃদয়ের সারা আলি খানের জীবনে আলোড়ন তোলে।

নীনা গুপ্তা এবং অনুপম খেরের জুটি গল্পে গুরুত্বপূর্ণ রং যোগ করে। নীনা গুপ্তা, যিনি তাঁর মেয়েদের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত, হঠাৎ স্কুলের পুরনো বন্ধু অনুপম খেরের সঙ্গে দেখা করেন এবং সেখান থেকে তাঁর গল্পে নতুন মোড় আসে। এই চরিত্রগুলির মধ্যে আপনি আপনার বাড়ির সম্পর্ক, আপনার সমস্যা এবং আপনার প্রত্যাশা খুঁজে পাবেন।

সিনেমাটির নির্মাণশৈলী এবং বার্তা

‘মেট্রো ইন দিনো’ কেবল সম্পর্কের সমস্যাগুলি দেখায় না, বরং সেগুলি সমাধানেরও চেষ্টা করে। সিনেমাটি কোনও উপদেশ দেয় না, কিন্তু প্রতিটি গল্পে আপনি নিজেকে উন্নত করার এবং সম্পর্কগুলিকে সুন্দর করার অনুপ্রেরণা পাবেন। প্রথমার্ধে গল্পটি দারুণভাবে এগিয়ে চলে, অনেক দৃশ্য আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধ কিছুটা ধীরগতির, তবে সেখানেও সিনেমাটি তার পথ থেকে বিচ্যুত হয় না।

অভিনয়ের জাদু

সিনেমাটির আসল শক্তি তার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। পঙ্কজ ত্রিপাঠী তাঁর অভিনয় দিয়ে মন জয় করেন। কনকনা সেন শর্মা তাঁর চরিত্রে অসাধারণ। নীনা গুপ্তা আবারও প্রমাণ করেন যে বয়স কোনও বাধা নয়। অনুপম খেরের সারল্য এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে আবেগপ্রবণ করে তুলবে। আদিত্য রায় কাপুর এবং আলি ফজল তাঁদের অংশে প্রাণ দিয়েছেন, যেখানে ফাতিমা সানা শেখও হৃদয় ছুঁয়ে যান। সারা আলি খানের চরিত্রটি সীমিত, কিন্তু তিনি ভালোভাবে অভিনয় করেছেন।

অনুরাগ বাসু এই সিনেমার আসল হিরো। এতগুলি চরিত্র, এতগুলি দ্বন্দ্বকে তিনি যে সুন্দরভাবে একসঙ্গে গেঁথেছেন, তা তাঁর পক্ষেই সম্ভব। তাঁর গল্পে যে মানবিক অনুভূতি থাকে, সেটাই এটিকে বিশেষ করে তোলে। প্রতিটি দৃশ্যে তাঁর সূক্ষ্ম কাজের ছাপ পাওয়া যায়। প্রীতমের সঙ্গীত এই সিনেমার আত্মা হয়ে আসে। গানগুলি কেবল বিনোদনের অংশ নয়, বরং গল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং চরিত্রগুলির অনুভূতিগুলিকে আরও গভীর করে তোলে।

কেন এই সিনেমাটি দেখবেন?

যদি আপনি এমন একটি সিনেমা চান যা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে, হৃদয়কে শান্তি দেবে এবং সম্পর্কের কদর করতে শেখাবে, তাহলে ‘মেট্রো ইন দিনো’ অবশ্যই দেখুন। অনুরাগ বসুর এই সিনেমাটি আপনার মনে থাকবে, ঠিক যেমন কোনও সুন্দর কবিতা হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।

Leave a comment