জাতীয় দলে ব্রাত্য, আইপিএলেও ব্যর্থ—সমস্যার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়া এক পেসার
এক সময় ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য মুখ, সেই মহম্মদ সামির দিন এখন অনেকটাই মেঘলা। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পেশাদার কেরিয়ার—দুই দিক থেকেই সময়টা ভালো যাচ্ছে না তারকা পেসারের। IPL 2025 মরশুমে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের হয়ে ৯ ম্যাচে মাত্র ৬ উইকেট। ইংল্যান্ড সিরিজে জাতীয় দলে সুযোগ না মেলায় তাঁর ‘রান-আপ’ থেমে গেছে মাঝপথেই। ব্যক্তিগত জীবনেও খোরপোশ মামলা, আদালতের নির্দেশে মাসে ৪ লক্ষ টাকা দিতে হয় প্রাক্তন স্ত্রী হাসিন জাহান ও কন্যা আইরাকে। এই ধাক্কার মধ্যেই জর্জরিত সামির ফিটনেসও, যা তাঁকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে প্রতিযোগিতার দৌড়ে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘রিসেট বোতাম’ চাপতে চলেছেন সামি, দলীপ ট্রফিই কামব্যাকের মঞ্চ
এই সমস্ত ব্যর্থতার পর নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় সামিল হয়েছেন সামি। জাতীয় দলে ফেরার দরজা খোলার চাবিকাঠি হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে। ২০২৫-২৬ মরশুমে অনুষ্ঠিত হতে চলা দলীপ ট্রফিতে দেখা যেতে পারে তাঁকে পূর্বাঞ্চলের হয়ে খেলতে। এটি সামির কাছে শুধু আরেকটি ম্যাচ নয়, বরং তাঁর ক্রিকেটীয় জীবন পুনর্গঠনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
দলীপ ট্রফির ফর্ম্যাটে পরিবর্তন, জোনাল ভিত্তিতে সামির জায়গা পূর্বাঞ্চলে
গতবার ভারতীয় A, B, C, D দলের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলেও এবারের দলীপ ট্রফি ফেরত এসেছে তার ঐতিহ্যবাহী রূপে—জোনভিত্তিক প্রতিযোগিতা। এই কারণেই বাংলার হয়ে খেলার দরজা খুলেছে সামির জন্য। পূর্বাঞ্চলের ৫০ জনের সম্ভাব্য তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এই অভিজ্ঞ পেসার। দলটি গঠন হয়েছে বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও আসাম রাজ্যের ক্রিকেটারদের নিয়ে। বাংলা থেকে তালিকায় আরও রয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন, মুকেশ কুমার, অভিষেক পোড়েল, আকাশ দীপের মতো প্রথম সারির খেলোয়াড়েরা।
দলে ঢোকার শেষ সুযোগ? ঘরোয়া পারফরম্যান্সই এখন একমাত্র ভরসা
সামি জানেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আর কোনও নির্ধারিত ম্যাচ নেই আগামী দু’মাসে। এমন সময়, একটি বড় মঞ্চে ভালো পারফর্ম করে নির্বাচকদের নজর কাড়াই তাঁর মূল লক্ষ্য। সাম্প্রতিক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সামির ইকোনমি রেট ছিল আশানুরূপ নয়—৫ ম্যাচে ৯ উইকেট তুললেও ইকোনমি ছুঁয়েছে ৬-এর দোরগোড়ায়। তাই সামির ফোকাস এখন লাল বলের ক্রিকেটেই নিজের জাত প্রমাণ করা। বয়স তাঁর পক্ষে নয়, ফর্মও নয়, কিন্তু অভিজ্ঞতা—সেটিই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
ফিটনেস, মানসিক চাপ এবং প্রত্যাবর্তনের চাপ—সবকিছুর ভার সামির কাঁধে
কেবল ক্রিকেট নয়, সামির ফোকাস এখন নিজের শরীর এবং মানসিক স্থিতিবস্থাও ফিরিয়ে আনা। ফিটনেস সমস্যা বারবার তাঁর ছন্দে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের জটিলতা তাঁকে বাইরে থেকেও কুরে কুরে খাচ্ছে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পর্ব সামির কাছে শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় নয়—এ এক আত্মমর্যাদা ও জীবনের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার লড়াইও।
সামির প্রত্যাবর্তনে ‘শেষের গান’ না, বরং আরেকবার শুরুর সম্ভাবনা?
মহম্মদ সামির ঘরে ফেরার চেষ্টাকে নিছক একটা বয়স্ক পেসারের শেষ চেষ্টা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। বরং এটি এক প্রমাণ—আবারও নিজেকে তৈরি করার, বুক ফুলিয়ে বল করার এবং নিজের বলের গতি আর সুইং-এ জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে ফেরার সাহসী আকাঙ্ক্ষা। সময় বলবে তিনি কতদূর যেতে পারবেন, তবে লড়াই শুরু করে দিয়েছেন তিনি। আর সেই লড়াই শুরু হচ্ছে বাংলা দলের হয়ে দলীপ ট্রফিতে, বাংলার মাটিতেই।