আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সম্প্রতি বলেছেন যে 'হিন্দু রাষ্ট্র'-এর অর্থ কোনো আঞ্চলিক বা রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল এর আসল মানে হল সকলের জন্য, কোনো রকম ভেদাভেদ ছাড়াই ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা, সে যে কোনো ধর্ম, ভাষা বা মতাদর্শের অনুসারীই হোক না কেন।
নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর প্রধান মোহন ভাগবত আবারও স্পষ্ট করেছেন যে "হিন্দু রাষ্ট্র" ধারণাটি নিয়ে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি ছড়ানো হয়। তিনি বলেন, হিন্দু রাষ্ট্রের অর্থ রাজনৈতিক ক্ষমতা বা শাসন নয়, বরং সকল নাগরিকের জন্য কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়া ন্যায়বিচার ও সমতা নিশ্চিত করা।
ভাগবত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শতবর্ষ বক্তৃতা সিরিজের “১০০ বছর-এর সংঘ যাত্রা: নতুন দিগন্ত” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন। এই সময়ে তাঁর এই বক্তব্য ভারতীয় রাজনীতি এবং বিশেষভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-র জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
ভাগবতের স্পষ্ট বার্তা: ‘আমরা কারো কাছে কিছু চাই না’
মোহন ভাগবত তাঁর ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন যে সংঘ কোনো সহযোগী সংগঠনকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না। সমস্ত সংগঠন স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত। তিনি বলেন – আমরা কারো কাছে কিছু চাই না। RSS কেবল সমাজের জন্য কাজ করে। এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিজেপির জন্য একটি উপদেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন দলের নেতৃত্ব এবং সংগঠন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
ভাগবত বলেন যে হিন্দু রাষ্ট্রের মানে কাউকে আলাদা করা বা বাদ দেওয়া নয়। আলাদা মতাদর্শ থাকা অপরাধ নয়। তিনি জানান, পশ্চিমা দেশগুলোর মতো "রাষ্ট্র"-কে শুধুমাত্র জমি বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখা উচিত নয়। তাঁর মতে, হিন্দু রাষ্ট্রের সারমর্ম হল প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার এবং সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। সে যে কোনো ধর্ম, ভাষা বা মতাদর্শের অনুসারীই হোক না কেন। তিনি বলেন যে “হিন্দু রাষ্ট্রের মানে কাউকে ভয় দেখানো বা ধমক দেওয়া নয়, বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা।”
‘হিন্দু’ শব্দের অর্থ
আরএসএস প্রধান তাঁর ভাষণে 'হিন্দু' শব্দের ব্যাখ্যাও দেন। তিনি বলেন যে হিন্দু-র অর্থ হল – “নিজের পথ নিজে বেছে নেওয়া এবং অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান জানানো। তিনি আরও যোগ করেন যে, যে এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে, সে হিন্দু, এবং এই ঐতিহ্যের উৎস হল ভারত। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের আসল সারমর্ম হল – একসঙ্গে মিলেমিশে চলা এবং সকলের প্রতি সম্মান রাখা।
ভাগবত বলেন যে আরএসএস-এর আত্মা তার প্রার্থনার শেষ পংক্তি “ভারত মাতা কি জয়”-এর মধ্যে নিহিত। সংঘের উদ্দেশ্য সর্বদা ভারতের উন্নতির জন্য কাজ করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এখন সময় এসেছে ভারত সারা বিশ্বে তার ভূমিকা পালন করবে এবং বিশ্বগুরু হিসেবে অবদান রাখবে। ভাগবতের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিজেপির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই প্রেক্ষাপটে সংঘ প্রধানের এই কথাগুলো রাজনৈতিক ইঙ্গিতবাহী বলেও মনে করা হচ্ছে।