নবান্ন অভিযান পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পথে নামলেন চাকরিহারারা!

নবান্ন অভিযান পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পথে নামলেন চাকরিহারারা!

ব্যারিকেডের মুখে আন্দোলনকারীরা, প্রতীকী নবান্ন নিয়ে রওনা

চাকরি বাতিল হওয়া চাকরিপ্রার্থীরা আজ আবার রাজপথে। পুলিশের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও তাঁরা শুরু করেছেন প্রতীকী 'নবান্ন অভিযান'। তাঁদের হাতে ‘নবান্ন’-এর প্রতীকী প্রতিরূপ, সেই প্রতিকী ছবি কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু। আন্দোলনের এই ধরণেই ফুটে উঠছে বঞ্চনার যন্ত্রণা। বাম যুব ছাত্র সংগঠন এবং আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মপ্রার্থীরা একত্রিত হয়ে আজ নবান্নের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি একটাই—অন্যায়ভাবে চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।

মঙ্গলাহাটে পুলিশের ঘেরাটোপ, বিক্ষোভে উত্তাল এলাকা

নবান্নে পৌঁছনো তো দূরের কথা, মিছিল থামিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। মঙ্গলাহাট সংলগ্ন এলাকায় ব্যারিকেড করে পুরো পথ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে RAF সহ বিপুল সংখ্যক পুলিশকর্মী। জোর করে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হলে লাঠিচার্জের প্রস্তুতিও চোখে পড়েছে। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সচেষ্ট। তবে তাতেও থামছেন না আন্দোলনকারীরা। ব্যারিকেডের সামনেই বসে পড়েছেন তাঁরা। চলছে স্লোগান—চাকরি চাই, চাকরি চাই, অন্যায়ের বিচার চাই।

‘নবান্ন’ যেন স্বপ্ন—প্রতীকী কাঠামোই বঞ্চিতদের প্রতিবাদের ভাষা

এই আন্দোলনে সবচেয়ে দৃষ্টি কেড়েছে একটি কাঠের তৈরি প্রতীকী ‘নবান্ন’ কাঠামো। আন্দোলনকারীরা কাঁধে তুলে নিয়ে সেই কাঠামোকে সামনে রেখেই মিছিল করছেন। তাঁদের কথায়, আসল নবান্নে যেতে পারছি না, তাই আমাদের স্বপ্নের প্রতীক নিয়েই রওনা হয়েছি। এই কাঠামো আমাদের আশাভরসার প্রতীক।” কলকাতা হাই কোর্টের একাধিক মামলায় চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ পথে নেমেছেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন একাধিক আন্দোলন নেতৃত্ব।

রাজনৈতিক বার্তা—নবান্নের বিরুদ্ধেই অভিযোগের সুর

চাকরিহারাদের অভিযোগ, এই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও আমরা বঞ্চিত। আমরা চেয়েছিলাম কাজ, সরকার দিয়েছে মামলা আর পুলিশ। এই ভাষাতেই ক্ষোভ ঝরে পড়েছে আন্দোলনকারীদের মুখে। 

পাল্টা প্রস্তুতি পুলিশের—তৈরি জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের সম্ভাবনা

পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। মিছিলে কোনওরকম গন্ডগোল বা সংঘর্ষ হলে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল। স্থানীয় দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দূরে সরে যাচ্ছেন। রাস্তায় যান চলাচল প্রায় স্তব্ধ। চারপাশে তৈরি হয়েছে থমথমে পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টাও ব্যর্থ, জানিয়েছে আন্দোলনকারী পক্ষ।

চাকরিহারাদের মনোবল অটুট, বার্তা—‘এই লড়াই থামবে না’

যদিও পুলিশী বাধা, আদালতের স্থগিতাদেশ কিংবা প্রশাসনিক হুঁশিয়ারি কিছুতেই দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না আন্দোলনকারীদের। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা—“যতদিন না ন্যায্য চাকরি ফিরছে, ততদিন আন্দোলন চলবে।” কেউ পোস্টার হাতে, কেউ গান গেয়ে, কেউবা আবৃত্তি করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই প্রতিবাদ যেন কেবল চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াই নয়—বরং এক সামাজিক ন্যায়ের দাবি। আগামী দিনে এই আন্দোলন আরও বড় আকার নিতে পারে বলে আভাস মিলছে।

Leave a comment