তেলেঙ্গানা ক্যাবিনেটের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: বিসি-দের জন্য ৪২% সংরক্ষণ

তেলেঙ্গানা ক্যাবিনেটের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: বিসি-দের জন্য ৪২% সংরক্ষণ

তেলেঙ্গানা ক্যাবিনেট বিসি-দের জন্য ৪২ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কার্যকর হবে এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তেলেঙ্গানা: তেলেঙ্গানা সরকার পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (Backward Class - BC)-এর জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় সংস্থাগুলিতে ৪২ শতাংশ সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির সভাপতিত্বে ১১ জুলাই, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত বিসি সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবি পূরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিধানসভায় ইতিমধ্যে পাস হয়েছে বিল

মার্চ ২০২৫-এর বিধানসভা অধিবেশনে তেলেঙ্গানা সরকার বিসি সম্প্রদায়কে শিক্ষা, চাকরি এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিতে ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ প্রদানের বিষয়ে দুটি বিল পাস করেছে। এর অধীনে, সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের সেই আদেশের পরেই এসেছে যেখানে নির্বাচনের আগে সংরক্ষণের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছিল।

জাতিগত সমীক্ষা এবং কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত

রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য একটি ডেডিকেটেড কমিশন গঠন করেছিল। এছাড়াও, রাজ্য পরিকল্পনা বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি বিস্তারিত জাতিগত সমীক্ষাও করা হয়েছিল। এই সমীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে সরকার সংরক্ষণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো অনুমানের উপর নির্ভর করেনি, বরং সুস্পষ্ট তথ্য ও তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করেছে।

পঞ্চায়েত রাজ আইনে সংশোধন করা হবে

বিসি সংরক্ষণের ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য বিদ্যমান পঞ্চায়েত রাজ আইন-২০১৮-এর সংশোধন প্রয়োজন ছিল। মন্ত্রিসভা এই সংশোধনীর অনুমোদনও দিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ, এমটিসি, এমপিপি, জেডপিটিসি এবং জেডপি চেয়ারম্যানের মতো পদে বিসি সম্প্রদায়কে ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ প্রদান করা হবে।

সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে বড় পদক্ষেপ

তেলেঙ্গানার পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী পোন্নম প্রভাকর সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক বলেছেন। তিনি বলেন, তেলেঙ্গানার "প্রজা পালনা সরকার" সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সংরক্ষণের মাধ্যমে রাজ্যে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অংশগ্রহণে উপযুক্ত স্থান পাবে।

রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সংরক্ষণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল। এই আদর্শের অধীনে, কংগ্রেস সরকার এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং তার সমাধানের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে।

সংরক্ষণ প্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

৪২ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ, যখন সরকার ব্যাপক জাতিগত গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর ফলাফলের ভিত্তিতে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ বিধানসভায় বিল পাস হয় এবং তারপর এই প্রস্তাব গভর্নরের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। এখন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে এও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ১৫ জুলাই থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। সরকার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে পুরো রাজ্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা কার্যকর করে দ্রুত নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজ্য সরকার বিসি সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করারও পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা স্থানীয় সংস্থাগুলিতে তাদের ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারে। এর জন্য বাজেট এবং প্রশাসনিক কাঠামোর পরিকল্পনা নিয়েও কাজ চলছে।

Leave a comment