স্ত্রীর বশীকরণের জন্য ৬ বছরের ভাইপোকে বলি! চাঞ্চল্যকর ঘটনা

স্ত্রীর বশীকরণের জন্য ৬ বছরের ভাইপোকে বলি! চাঞ্চল্যকর ঘটনা

রাজস্থানের আলওয়ার জেলার মুন্ডাওয়ার থানা এলাকা থেকে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে, যা মানবতাকে লজ্জিত করেছে। সরাই কলা গ্রামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বশ করার জন্য তান্ত্রিকের পরামর্শে নিজের ৬ বছরের ভাইপোর বলি দিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা শুনে সবাই হতবাক। অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশুটির গলা টিপে হত্যা করে এবং তারপর তার শরীর থেকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করে নেয়। যদিও, সে কলিজা বের করতে পারেনি।

পুলিশের তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে অভিযুক্ত চাচা মনোজ প্রজাপতির স্ত্রী কিছু দিন ধরে তার বাপের বাড়িতে ছিলেন। স্ত্রীকে ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তন্ত্র-মন্ত্রের মাধ্যমে তাকে বশ করার জন্য মনোজ সুনীল নামের এক তান্ত্রিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তান্ত্রিক তাকে একটি শিশুর বলি দেওয়ার পরামর্শ দেয় এবং বলে যে তার একটি বালকের রক্ত ও কলিজা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে সে তন্ত্র ক্রিয়া করতে পারবে। তান্ত্রিক এই কাজের জন্য ১২,০০০ টাকাও চেয়েছিল।

আবর্জনার স্তূপে মিলল লাশ

এই ঘটনাটি ৯ জুলাই তারিখের দুপুরে ঘটে, যখন সরাই কলা গ্রামের বাসিন্দা বিন্টু প্রজাপতির ছেলে লোকেশ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন প্রথমে নিজেরা খোঁজার চেষ্টা করে, কিন্তু যখন কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না, তখন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। অনুসন্ধানের সময় গ্রামের একটি নির্জন हवेলীর কাছে আবর্জনার স্তূপ থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহ পাওয়ার পর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং মনে হচ্ছিল গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।

পরের দিন মৃতের বাবা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করে এবং প্রযুক্তিগত প্রমাণ ও পরিবারের সদস্যদের বিবৃতির ভিত্তিতে অভিযুক্তের কাছে পৌঁছায়।

নিজের চাচাই খুন করেছিল

তদন্তের সময় পুলিশ যখন মৃতের মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন তিনি তার দেওর মনোজের উপর সন্দেহ প্রকাশ করেন। এরপর পুলিশ মনোজ সহ তিনজনকে আটক করে। কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মনোজ অপরাধ স্বীকার করে। সে জানায় যে তান্ত্রিকের কথা অনুযায়ী সে নিজের ভাইপোকে মারার পরিকল্পনা করেছিল।

মনোজ লোকেশকে ভুলিয়ে ভালিয়ে গ্রামের একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে সে গলা টিপে শিশুটিকে হত্যা করে, তারপর ইঞ্জেকশন দিয়ে রক্ত বের করে নেয়। পরে সে মৃতদেহটি খড়ের গাদায় লুকিয়ে রাখে যাতে সুযোগ পেলে কলিজা বের করতে পারে। যদিও তার আগেই পুলিশ ও পরিবারের লোকজন সেখানে পৌঁছে যায় এবং মৃতদেহ উদ্ধার করে।

এই জঘন্য অপরাধে জড়িত তান্ত্রিক সুনীলকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সেও জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকার করেছে যে সে মনোজকে তার স্ত্রীর ফেরত আসা এবং বশীকরণের নামে একটি বালককে বলি দিতে বলেছিল।

১২ হাজার টাকায় মৃত্যুর सौदा

পুলিশের তদন্তে আরও জানা গেছে যে তান্ত্রিক ১২,০০০ টাকা চেয়েছিল এবং বলেছিল যে বলির সাথে রক্ত ও কলিজা পেলে সে তন্ত্রবিদ্যার মাধ্যমে স্ত্রীকে বশ করে দেবে। এই অন্ধবিশ্বাসে মত্ত মনোজ না ভেবেচিন্তে নিজের ভাইয়ের ছেলেকে হত্যা করে।

গ্রামে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সবাই হতবাক হয়ে যায়। মানুষ বুঝতে পারছিল না যে একজন চাচা কীভাবে এত নিষ্ঠুরভাবে নিজের নিষ্পাপ ভাইপোর প্রাণ নিতে পারে। গ্রামে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং মানুষ অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি করছে।

গ্রামে আতঙ্ক, তদন্ত চলছে

সরাই কলা গ্রামে এই ঘটনার পর উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে এবং মানুষ অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। পুলিশ এই ঘটনায় হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং কালো জাদু সম্পর্কিত ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

অন্যদিকে, পুলিশ সুপার জানিয়েছেন যে পুরো ঘটনার গভীরতা দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তান্ত্রিকের কাজকর্ম এবং তার নেটওয়ার্কও খতিয়ে দেখা হচ্ছে যাতে এটা জানা যায় যে আর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা।

এই ঘটনা শুধু আইন-শৃঙ্খলার জন্য চ্যালেঞ্জ নয়, বরং সমাজে আজও বিদ্যমান অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। পুলিশ প্রশাসন সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে কোনো সমস্যার সমাধান তান্ত্রিক বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছ থেকে নয়, বরং সঠিক তথ্য ও বোঝার মাধ্যমে করতে হবে।

Leave a comment