দেশে ব্যাংকিং সেক্টরে বড় পরিবর্তনের আভাস শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্র সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI)-এর মধ্যে নতুন ব্যাংকগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে গুরুতর আলোচনা চলছে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে, প্রায় এক দশক পর ভারতে নতুন ব্যাংক অনুমোদন করা হবে।
সূত্রানুসারে, এই পদক্ষেপের পিছনে সরকারের উদ্দেশ্য হল দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার আরও শক্তিশালী করা। এছাড়াও, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ অর্থাৎ দেশের প্রতিটি কোণে ব্যাংকিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াও এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
বড় কোম্পানিগুলিকে সীমিত প্রবেশাধিকার পেতে পারে
রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকার বিবেচনা করছে যে কিছু শর্তসাপেক্ষে কর্পোরেট কোম্পানিগুলিকেও ব্যাংকিং সেক্টরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ, যে সমস্ত বড় কোম্পানির ব্যালেন্স শীট শক্তিশালী, তাদের ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
তবে এর জন্য বেশ কিছু কঠোর নিয়ম তৈরি করা হবে, যাতে কোনো ধরণের কর্পোরেট সুশাসনে (corporate governance) কোনো সমস্যা না হয়। এই ধারণা নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু রিজার্ভ ব্যাংকের সতর্কতার কারণে সেই সময়ে এটি স্থগিত ছিল। এখন আবার এই বিকল্পটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
NBFC-গুলি পূর্ণ ব্যাংক হওয়ার ছাড় পেতে পারে
সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একসাথে এই বিষয়েও আলোচনা করছে যে কিছু নির্বাচিত নন-ব্যাংকিং আর্থিক কোম্পানিকে (NBFCs) পূর্ণ ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়া যায় কিনা।
NBFC-গুলির ইতিমধ্যে গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে এলাকাগুলিতে ভালো প্রভাব রয়েছে। যদি তাদের ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া হয়, তবে তারা তাদের গ্রাহকদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, চেক বই, ATM এবং ঋণ সম্পর্কিত আরও বেশি সুবিধা দিতে পারবে।
বাজারে দেখা গেল আলোড়ন, PSU ব্যাংক সূচক বৃদ্ধি
এই খবর বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নিফটি PSU ব্যাংক সূচকে দ্রুত বৃদ্ধি দেখা গেছে। যেখানে সকালের সেশনে এই সূচক ০.৮ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, সেখানে দুপুরের পরে এতে ০.৫ শতাংশের পুনরুদ্ধার হয়।
এই বছর এখন পর্যন্ত এই সূচকে প্রায় আট শতাংশের বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা প্রমাণ করে যে বিনিয়োগকারীদের সরকারি ব্যাংকগুলির প্রতি আস্থা বাড়ছে।
২০১৪ সালের পর কোনো নতুন ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়া হয়নি
ভারতে সবশেষ ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে। তারপর থেকে, এখন পর্যন্ত দেশে কোনো নতুন ব্যাংক স্থাপন করা হয়নি। যদিও ২০১৬ সালে কিছু শিল্পগোষ্ঠী ব্যাংকিং পারমিটের জন্য আবেদন করেছিল, তবে সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এখন যখন আবার আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন মনে করা হচ্ছে যে আগামী দিনে অনেক নতুন নাম এই সেক্টরে প্রবেশ করতে পারে।
সংবেদনশীল এই সিদ্ধান্ত, RBI দেখাচ্ছে সতর্কতা
ব্যাংকিং এমন একটি সেক্টর যেখানে জনগণের উপার্জন এবং ভবিষ্যতের আশা জড়িত থাকে। এমতাবস্থায়, এই সেক্টরে কোনো ধরনের অসাবধানতা বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এই কারণেই, সরকার এই দিকে এগিয়ে যেতে চাইলেও, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খুব সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিচ্ছে। সূত্রানুসারে, RBI এই পুরো বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রথমে একটি পাইলট মডেল (pilot model) প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করতে পারে।
RBI এবং সরকারের মধ্যে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার এবং RBI-এর মধ্যে এই বিষয়ে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং এখন এই বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে। সম্ভবত আগামী মাসগুলিতে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
নতুন ব্যাংক স্থাপন সংক্রান্ত কিছু প্রধান বিষয়
- কর্পোরেট হাউসগুলিকে সীমিত শর্তে প্রবেশাধিকার
- NBFC-কে ব্যাংকিং লাইসেন্সে রূপান্তরের বিকল্প
- গ্রামীণ ও আধা-শহুরে অঞ্চলে বিস্তার
- ডিজিটাল ব্যাংকিং-এর প্রসারের পরিকল্পনা
- বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য উদার নীতি