রাধিকা যাদব হত্যা: বাবার জড়িত থাকার কারণ, তদন্তের অগ্রগতি

রাধিকা যাদব হত্যা: বাবার জড়িত থাকার কারণ, তদন্তের অগ্রগতি

টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের হত্যা মামলায় তাঁর বাবা দীপক যাদব অভিযুক্ত। সমাজের কটাক্ষ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি এবং মিউজিক ভিডিও নিয়ে হত্যার কারণগুলির তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকটি দিক উঠে এসেছে।

Radhika Yadav Murder Case: গুরুগ্রামে জাতীয় স্তরের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের হত্যা গোটা দেশকে স্তম্ভিত করেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাধিকার বাবা দীপক যাদব তাঁকে গুলি করেছেন। সমাজের কটাক্ষকে এই হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, তবে পুলিশ এই মামলায় আরও কিছু দিক খতিয়ে দেখছে। মা এবং ভাইয়ের সন্দেহজনক আচরণও সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের মর্মান্তিক মৃত্যু

গুরুগ্রামে ২৫ বছর বয়সী জাতীয় টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের হত্যার ঘটনা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এই মামলার অভিযুক্ত আর কেউ নন, বরং তাঁর নিজের বাবা দীপক যাদব। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দীপক তাঁর মেয়ের টেনিস একাডেমি বন্ধ না করার জেদের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে গুলি করেন। কিন্তু তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই এই হত্যাকে ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে, যা ভিন্ন ভিন্ন দিকে ইঙ্গিত করছে।

বাবা কেন মেয়ের হত্যা করলেন?

দীপক যাদবের দাবি, তিনি সমাজের কটাক্ষে অতিষ্ঠ হয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, যখন তিনি গ্রামে গিয়েছিলেন, তখন সেখানকার লোকেরা তাঁকে ‘মেয়ের রোজগার খাওয়া’-এর মতো কথা বলেছিল। লোকেরা তাঁর মেয়ে সম্পর্কে মিথ্যা কথাও বলেছিল, যার কারণে তিনি সামাজিক বদনামের ভয়ে ছিলেন। এই চাপের কারণেই তিনি রাধিকাকে একাডেমি বন্ধ করতে বলেন, কিন্তু রাধিকা রাজি না হওয়ায় তিনি তাঁকে গুলি করেন।

কিন্তু শুধু সমাজের কটাক্ষই কি কারণ ছিল?

পুলিশ পুরো বিষয়টি একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে না। সমাজের কটাক্ষে অতিষ্ঠ হয়ে কোনো বাবা যদি তাঁর মেয়েকে হত্যা করেন, তবে এই কথাটি যেমন গুরুতর, তেমনই সন্দেহজনকও। পুলিশ এই মামলায় এমন পাঁচটি দাবির তদন্ত করছে, যা এই হত্যাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে।

দাবি ১: সমাজের কটাক্ষে অতিষ্ঠ হয়ে দীপক গুলি করেন

দীপক যাদব তাঁর মেয়ের সাফল্যে গর্বিত ছিলেন। তিনিই রাধিকার টেনিস ক্যারিয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রতিবেশীদের এবং আত্মীয়দের সামনে তিনি প্রায়ই মেয়ের একাডেমির কথা উল্লেখ করতেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মেয়ের রোজগার নিয়ে লজ্জিত ছিলেন, এটা যুক্তিযুক্ত মনে হয় না।

দাবি ২: ‘মেয়ের রোজগার খাওয়া’-এর কটাক্ষে ক্ষুব্ধ ছিলেন দীপক

দীপক যাদব আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি ছিলেন না। তাঁর ভালো সম্পত্তি ব্যবসার কারবার ছিল। তাঁর বছরে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যবসা থেকে এবং ১ কোটি টাকার বেশি ভাড়া থেকে আয় হতো। এমতাবস্থায় রাধিকার রোজগার তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় ছিল না।

দাবি ৩: রিল এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিতে বাবার আপত্তি ছিল

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, রাধিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। তাঁর ইনস্টাগ্রামে বেশি ফলোয়ারও ছিল না এবং তিনি খুব বেশি রিলও পোস্ট করেননি। তাঁর কোচের মতে, তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে গুরুত্ব দিতেন না, বরং খেলা এবং একাডেমিই ছিল তাঁর প্রধান অগ্রাধিকার।

দাবি ৪: মিউজিক ভিডিও এবং বন্ধুত্বের কারণে বাবার আপত্তি ছিল

রাধিকার একটি মিউজিক ভিডিও নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে তাঁকে ইনামুল নামক এক অভিনেতার সঙ্গে দেখা গেছে। শোনা যাচ্ছে, বাবার এটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু এই ভিডিওটি দু'বছর আগের এবং শুটিংয়ের সময় দীপক নিজেই তাঁকে সেটে নিয়ে যেতেন। এমতাবস্থায়, এই দাবিও দুর্বল বলে মনে হয়।

দাবি ৫: মা এবং ভাই কিছুই জানতেন না

হত্যার সময় রাধিকার মা একই ফ্লোরে উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনার পরেও তাঁর কিছু না শোনা বা ইচ্ছাকৃতভাবে চুপ থাকাটা তাঁকে সন্দেহের তালিকায় ফেলেছে। মা পুলিশকে বয়ান দিতে অস্বীকার করেছেন এবং অসুস্থতার ভান করেছেন। অন্যদিকে, রাধিকার ভাইয়ের অবস্থান এবং গতিবিধির কোনো তথ্য নেই।

রাধিকার একাডেমি এবং বাবার ভূমিকা

দীপক যাদবই তাঁর মেয়ের জন্য টেনিস একাডেমি শুরু করেছিলেন। তিনি তাঁর খেলাধুলার জীবনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করেছেন। দামি র‍্যাকেট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট পর্যন্ত তিনি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। রাধিকার টেনিস একাডেমি এখন সফল এবং পরিবারের আয়ের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে, যিনি মেয়ের স্বপ্নকে নিজের অর্থে লালন করেছেন, তিনি হঠাৎ করে কীভাবে তাঁর জীবন নিতে পারেন?

রাধিকার ক্যারিয়ার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝোঁক

রাধিকা একসময় আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু কাঁধের চোটের কারণে তাঁকে তাঁর পেশাদার টেনিস জীবন ছাড়তে হয়। এরপর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হতে শুরু করেন। তিনি এলভিশ যাদবের মতো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে চেয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, বাবার রাধিকার এই নতুন প্রবণতা, বিশেষ করে ভিডিও এবং মিউজিক শুটে তাঁর অংশগ্রহণ পছন্দ হয়নি।

পুলিশের তদন্ত: একাধিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে

গুরুগ্রাম পুলিশ এই মামলার গভীর তদন্ত করছে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, পরিবারের মোবাইল রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজ এবং কল ডিটেলস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কেন ডি-অ্যাক্টিভেট করা হয়েছিল, সে বিষয়েও পুলিশ নজর রাখছে। একইসঙ্গে, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Leave a comment