সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি: আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত

সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি: আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামে টানা তৃতীয় কার্যদিবসে বৃদ্ধি দেখা গেছে। শুক্রবার এর দাম প্রায় 3330 ডলার প্রতি আউন্স পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই বৃদ্ধি এমন এক সময়ে দেখা যাচ্ছে যখন বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পরিবেশ গভীর হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছেন, যা ঐতিহ্যগতভাবে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হয়।

আন্তর্জাতিক অস্থিরতার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ সোনা

একদিকে, যেখানে বিশ্ব বাজারে শেয়ারের উত্থান-পতন এবং বন্ডের ফলনে অস্থিরতা চলছে, অন্যদিকে সোনা আবার বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় উঠে আসছে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক কানাডা থেকে আমদানির উপর 35 শতাংশ শুল্ক ঘোষণা এবং অন্যান্য দেশগুলির উপরও শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়েছে।

ফেডের সুদের হার হ্রাস এবং ডলার সূচকের গতিবিধি

সোনার দাম নিয়ে বাজারে আলোচনা চলছে, এই বৃদ্ধি ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকতে পারে কিনা। এমকে ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে সোনার দাম দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দ্বারা প্রভাবিত হবে। প্রথমত, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নীতি এবং দ্বিতীয়ত, ডলার সূচকের গতিবিধি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ফেড কর্তৃক সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্য দুর্বল হতে পারে, যা সোনাকে সমর্থন করবে।

এমকে ওয়েলথের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সমর্থন স্তর এবং প্রবণতা

এমকে ওয়েলথের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে সোনার দাম একত্রীকরণের পর্যায়ে রয়েছে, যা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত হতে পারে। কারিগরি দিক থেকে, সোনা 3297 ডলার এবং 3248 ডলার প্রতি আউন্স স্তরে শক্তিশালী সমর্থন পেতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন ডলারের দৃঢ়তা এবং বন্ডের ফলনে ঊর্ধ্বগতির কারণে সোনার উপর চাপ ছিল, তবে এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি থেকে অনিশ্চয়তার পরিবেশ বৃদ্ধি

মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত নতুন শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে এবং এর প্রভাব কানাডার পাশাপাশি অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপরেও দেখা যাবে।

এই পরিস্থিতিতে বাজারের আশঙ্কা, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল প্রভাবিত হতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও তাদের আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন করতে হতে পারে।

ফেডের নীতির দিকে সকলের দৃষ্টি

ট্রাম্প ফেডকে 300 বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও, ফেডের বর্তমান অবস্থান সতর্ক রয়েছে। আমেরিকাতে খুচরা মূল্যের উপর নতুন শুল্কের প্রভাব কী হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই।

তবে বাজারের ধারণা তৈরি হচ্ছে যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ফেড এক বা দুবার সুদের হার কমাতে পারে। এর কারণ দুর্বল মুদ্রাস্ফীতির হার এবং হ্রাসমান ভোক্তা আস্থা।

ডলার সূচকে পতনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি

এমকে ওয়েলথের মতে, যদি সুদের হার কমানো হয়, তাহলে ডলার সূচকে আরও দুর্বলতা আসতে পারে। বর্তমানে ডলার সূচক 97.00-তে রয়েছে এবং এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এতে প্রায় 10 শতাংশ পতন হয়েছে।

এই পতনের প্রভাব সোনায় দেখা যেতে শুরু করেছে। দুর্বল ডলারের কারণে সোনা অন্যান্য মুদ্রায় সস্তা হয়ে যায়, যা আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়ায়। যদি এই প্রবণতা বজায় থাকে, তবে সোনার দামে আরও দৃঢ়তা দেখা যেতে পারে।

Leave a comment