এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট: কো-পাইলটের হাতে ছিল নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি বন্ধ হয়ে ঘটল বিপর্যয়

এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট: কো-পাইলটের হাতে ছিল নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি বন্ধ হয়ে ঘটল বিপর্যয়

এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে, ওড়ার সময় কো-পাইলট বিমান চালাচ্ছিলেন। টেকঅফের পরেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বিমানটি ভেঙে পড়ে।

বিমান দুর্ঘটনা: আহমেদাবাদে হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট সামনে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় বিমানের নিয়ন্ত্রণ কো-পাইলটের কাছে ছিল, যেখানে ক্যাপ্টেন নজর রাখছিলেন। টেকঅফের কয়েক সেকেন্ড পরেই উভয় ইঞ্জিনে জ্বালানির সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

টেকঅফের পর জ্বালানি সুইচ 'RUN' থেকে 'CUTOFF'-এ চলে যায়

বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরোর (AAIB) রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, ১২ জুন দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করার পরেই বিমানে প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দেয়। মাত্র ২৬ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বালানি সরবরাহকারী উভয় সুইচ 'RUN' থেকে 'CUTOFF' অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে ইঞ্জিন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR)-এ রেকর্ড হওয়া কথোপকথনে এক পাইলটকে বলতে শোনা যায়, “তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?”, উত্তরে শোনা যায়, “আমি তো বন্ধ করিনি।”

ক্যাপ্টেনের ছিল দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, কো-পাইলট বিমান চালাচ্ছিলেন

এই ফ্লাইট AI171 একটি Boeing 787-8 Dreamliner পরিচালনা করছিল। ক্যাপ্টেন সুমিত সভারওয়াল, ৫৬ বছর বয়সী, একজন সিনিয়র ট্রেনিং পাইলট ছিলেন, যাঁর মোট ১৫,৬৩৮ ঘণ্টার উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছিল। এর মধ্যে ৮,৫৯৬ ঘণ্টা তিনি Boeing 787 বিমানে উড়ে অর্জন করেছেন। অন্যদিকে, কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্ডার বয়স ছিল ৩২ বছর এবং তাঁর মোট ৩,403 ঘণ্টার অভিজ্ঞতা ছিল। Dreamliner-এ তিনি ১,১০০ ঘণ্টা উড়েছিলেন। দুর্ঘটনার সময় বিমানের নিয়ন্ত্রণ কুন্ডারের কাছে ছিল।

MAYDAY কলের পর বিমান বিধ্বস্ত হয়

রিপোর্টে বলা হয়েছে, টেকঅফের মাত্র ২৬ সেকেন্ড পরে দুপুর ১টা ৩৯:০৫ মিনিটে এক পাইলট জরুরি 'MAYDAY... MAYDAY... MAYDAY...' কল করেন। এর ঠিক পরেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এই দুর্ঘটনায় ২৬০ জন প্রাণ হারান, যার মধ্যে ছিলেন ২৪২ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্য। শুধুমাত্র একজন যাত্রী জীবিত ছিলেন।

কোনো প্রযুক্তিগত ষড়যন্ত্র নয়, তদন্ত চলছে

AAIB তাদের রিপোর্টে বলেছে যে, এখন পর্যন্ত তদন্তে কোনো প্রযুক্তিগত ষড়যন্ত্র বা ত্রুটির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। GE GEnx-1B ইঞ্জিন বা Boeing 787-8-এর ডিজাইন সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি নিশ্চিত করা যায়নি। বর্তমানে উভয় ইঞ্জিনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে বিমানবন্দরের একটি সুরক্ষিত হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছে। ড্রোন দিয়ে ঘটনাস্থলের ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফি করা হয়েছে।

জ্বালানি নমুনার পরীক্ষায় সব ঠিক পাওয়া গেছে

তদন্তের অংশ হিসেবে বিমানের জ্বালানি ট্যাঙ্ক এবং বাউজার থেকে নেওয়া জ্বালানির নমুনাও পরীক্ষা করা হয়েছে। এই নমুনাগুলি সম্পূর্ণ সন্তোষজনক পাওয়া গেছে, যা খারাপ জ্বালানির কারণে দুর্ঘটনার হওয়ার সম্ভাবনাকে বাতিল করে দিয়েছে। বর্তমানে AAIB-এর টিম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলির ফরেনসিক পরীক্ষায় নিযুক্ত রয়েছে।

পাইলটের ভুল নাকি প্রযুক্তিগত ত্রুটি?

যেহেতু টেকঅফের ঠিক পরেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং কোনো পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেননি, তাই প্রশ্ন উঠছে এটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল নাকি মানবিক ভুল। রিপোর্টে এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এরপরের তদন্তে এই দিকটি প্রধান হবে যে সুইচগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়েছিল, নাকি ভুল করে কোনো বোতাম টিপেছিল।

Dreamliner-এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

Boeing 787-8 Dreamliner-কে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিমানগুলির মধ্যে গণনা করা হয়। এটি অত্যাধুনিক এভিওনিক্স সিস্টেম এবং ট্রিপল-রিডান্ডেন্সি প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত। এই বিমানে এই ধরনের ব্যর্থতা অস্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্টে Dreamliner বা GE ইঞ্জিনের সিস্টেমে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।

চূড়ান্ত রিপোর্টে যুক্ত হবে আরও অনেক সূত্র

AAIB ইঙ্গিত দিয়েছে যে, চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসতে পারে। দুর্ঘটনার জটিল প্রকৃতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। এর মধ্যে মানব ত্রুটি, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, ডিজাইনগত ত্রুটি বা সিস্টেমের ব্যর্থতা-এরকম সম্ভাব্য সমস্ত কারণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

Leave a comment