নির্মলা সীতারামন: ভারত আগামী বছরগুলিতেও বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি

নির্মলা সীতারামন: ভারত আগামী বছরগুলিতেও বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন যে আগামী বছরগুলিতেও ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে নিজের স্থান ধরে রাখবে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আরও একবার ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত আগামী দিনেও বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে অন্যতম থাকবে। এই মন্তব্য তিনি ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিওতে অনুষ্ঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)-এর বার্ষিক বৈঠকে করেছেন।

মহামারীর পর ভারতের পুনরুদ্ধার-এর প্রশংসা

সীতারামন বলেছেন যে করোনা মহামারীর ধাক্কা সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা প্রমাণ করে যে দেশে স্থিতিশীলতা রয়েছে এবং নীতি নির্ধারণ সঠিক পথে হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের বৃদ্ধি শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির কারণে সম্ভব হয়েছে।

জটিল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারতের স্থিতিশীলতা

অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন যে বর্তমান সময়ে বিশ্ব আর্থিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা সহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, ভারত তার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল এবং গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত কেবল নিজের জন্য নয়, বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

উন্নয়নের জন্য সরকারি ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা

বৈঠকে নির্মলা সীতারামন এনডিবি-কে ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তাগুলি বিবেচনা করে কৌশলগত অগ্রাধিকারের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সরকারি মূলধনী ব্যয় (পাবলিক ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার) বৃদ্ধি করা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যাতে উন্নয়নের গতি বজায় রাখা যায়।

এনডিবি-র আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা

অর্থমন্ত্রী নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থায়নের চাহিদা অনেক বেশি এবং এনডিবি-কে এই চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য তার পরিধি এবং সম্পদ বাড়াতে হবে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার প্রভাব বিশ্ব মঞ্চে

অর্থমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে যেভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণকে উৎসাহিত করেছে, তা উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য একটি মডেল। ডিজিটাল পেমেন্ট হোক, আধার-সংযুক্ত পরিষেবা হোক বা ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার, ভারত এই সমস্ত ক্ষেত্রেই চমৎকার কাজ করেছে।

বহুপাক্ষিক ব্যাংকগুলির জন্য নতুন কাঠামো প্রয়োজন

সীতারামন মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকগুলির জন্য 'ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি ফ্রেমওয়ার্ক' (CAF)-এর অধীনে দৃঢ় এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে ভারতের ২০২৩ সালের জি-২০ সভাপতিত্বের সময় এমডিবি-গুলিতে সংস্কারের জন্য সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যা এখন আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন।

ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের ভূমিকার উল্লেখ

সীতারামন উল্লেখ করেন যে ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের সময় যে বড় সংস্কারগুলি প্রস্তাবিত হয়েছিল, সেগুলি আজকের বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। ভারত কেবল পরামর্শই দেয়নি, বরং সেগুলি কার্যকর করার দিকে নেতৃত্বও দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন অন্যান্য দেশ এবং সংস্থাগুলির এই দিকে গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে যাওয়া দরকার।

জলবায়ু অর্থায়নের উপরও মনোযোগ

সীতারামন বলেন যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ এবং এর সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজন। তিনি এনডিবি-কে সবুজ প্রকল্প (গ্রিন প্রজেক্টস) এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের শক্তিশালী উপস্থিতি

এই পুরো বৈঠকের সময় ভারতের অর্থমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা ছিল যে ভারত কেবল নিজের উন্নতি করছে না, বরং বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলির কণ্ঠস্বরও জোরালো করছে। তিনি আস্থা প্রকাশ করেছেন যে আগামী দিনে ভারতের অর্থনৈতিক গতি এবং তার ভূমিকা উভয়ই আরও শক্তিশালী হবে।

Leave a comment