পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের গোপালবেড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ইন্দুটি গ্রামের শ্মশানে যেতে হলে পেরোতে হয় হাঁটু সমান কাদা-জল। শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা আদৌ নেই। বর্ষায় সেই যাত্রা আরও দুঃসহ হয়ে ওঠে। সংবাদ নয়, যেন জীবনের এক নির্মম পরিহাস। শ্মশান যাত্রাও এখানকার মানুষের কাছে যেন আরও এক যুদ্ধ।
৮০০ মিটার দুর্ভোগের রাস্তা, বছরের পর বছর অবহেলিত
মাত্র ৮০০ মিটার রাস্তা। অথচ বহুবার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও সংস্কার হয়নি। বর্ষা এলেই এই রাস্তা হয়ে ওঠে মৃত্যুঞ্জয় না হবার সাক্ষ্য।এমন এক অবস্থা, যেখানে মৃত্যুর পরে পরিবারকে সম্মান দিতে গিয়েও লড়তে হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে। এটা কি উন্নয়নের চেহারা?
দেহ সৎকার স্থগিত, কাদায় আটকে সম্মানের অন্ত্যযাত্রা
গত শনিবার এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরও রাস্তার অবস্থার কারণে সৎকার করা যায়নি সেদিন। রবিবার সকালে, কাদা আর জল ঠেলে দেহ নিয়ে যেতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খান আত্মীয়েরা।মৃত্যুর পরের মুহূর্তে যেখানে শান্তি ও প্রার্থনার আবহ থাকার কথা, সেখানে ঘটছে অসম্মান আর সংগ্রামের দৃশ্যপট।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল ছবিরা, গর্জে উঠল বিরোধীরা
দেহ নিয়ে কাদা-জল পার হওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই তা ভাইরাল হয়। জনরোষ বাড়তে না বাড়তেই সিপিএম ও বিজেপি একযোগে আক্রমণ শানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে।এক গ্রামের যন্ত্রণা এখন গোটা রাজ্যের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। ভোটের আগে এমন ছবি রীতিমতো অস্বস্তিকর শাসকদলের জন্য।
সিপিএমের কটাক্ষ, "মরেও শান্তি নেই", উন্নয়নের নামে কসমেটিক ঢাকপিটুনি
সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ বলেন, মরার পরেও শান্তি নেই। কাটমানির রাজত্বে রাস্তা তো নয়ই, হাসপাতালেও পৌঁছনো যাচ্ছে না। এটা রাজ্যের শাসনের দেউলিয়াপনা।বাম নেতৃত্বের অভিযোগে উঠে আসছে শাসকদলের 'কাগুজে উন্নয়ন'–এর বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্রূপ।
বিজেপির তোপ, “৯৯ শতাংশ উন্নয়নের নমুনা এই কাদামাটি”
বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “তৃণমূল বলছে রাজ্যে ৯৯ শতাংশ উন্নয়ন হয়ে গিয়েছে! তাহলে এই রাস্তা কীভাবে আছে? তৃণমূল নেতারা শুধু কাটমানি আর দুর্নীতির মধ্যেই ব্যস্ত।”কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বনাম রাজ্য সরকারের দাবির মধ্যে এই ঘটনাকে বিজেপি তুলে ধরছে ‘বাস্তব ছবি’ হিসেবে।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া, "দ্রুত রাস্তা হবে", বিরোধীদের ‘দেখার চোখ’ নেই
তৃণমূল মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস দাবি করেন, উন্নয়ন সারাবাংলায় হয়েছে। বিরোধীরা শুধু কালো চশমা পরে বসে আছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার আশ্বাস দিয়েছেন, তাড়াতাড়ি রাস্তা তৈরি হবে।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এখন আশ্বাসে ঘুঁচছে তৃণমূল। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এতদিন কেন কিছু হয়নি?