বৃষ্টিতে স্তব্ধ শহর
প্রবল বর্ষণে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বই। শুক্রবার রাতভর চলা টানা বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে রেললাইন পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে জলের তলায়। শনিবার সকালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, মুম্বই বিমানবন্দরেও জমেছে জল। এর ফলে স্বাভাবিক বিমান পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বিমানের দেরি ও ঘুরপথে অবতরণ
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৫০টিরও বেশি বিমান দেরিতে চলছে। এক ডজনের বেশি বিমানের গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে, পাশাপাশি দু’টি বিমানকে বাধ্য হয়ে নাগপুর ও আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে নামতে হয়েছে। বৃষ্টির তীব্রতা এতটাই ছিল যে, আকাশে ওঠা যাত্রীবাহী বিমানগুলিও নিরাপত্তার খাতিরে সরাসরি অবতরণ করতে পারেনি মুম্বইয়ে।
বৃষ্টির ভয়াবহ চেহারা
ভারী বর্ষণে শুধু বিমান পরিষেবা নয়, শহরের জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এক রাতের বৃষ্টিতে দাদর ও বান্দ্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন জলমগ্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। বহু এলাকা ডুবে গিয়েছে হাঁটু থেকে কোমর সমান জলে। শহরের কুর্লা, চেম্বুর, আন্ধেরি, ভিখরোলির মতো এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাণহানির ঘটনা
বর্ষার তাণ্ডবে শহরে প্রাণহানির খবরও মিলেছে। ভিখরোলির বর্ষানগর এলাকায় ধস নামায় ভেঙে পড়ে একটি আবাসনের একাংশ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে দুই বাসিন্দার। আহত হয়েছেন আরও দুইজন, যাঁরা এখন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মাত্র ২১ ঘণ্টায় ভিখরোলিতে ২৪৮ মিলিমিটার এবং সান্তাক্রুজে ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
লাল সতর্কতা জারি
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবারও শহর এবং সংলগ্ন রায়গড় জেলায় প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। নাগরিকদের সতর্ক থাকতে ও অযথা বাইরে বের না হতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশ ও পুরসভার সতর্কবার্তা
মুম্বই পুলিশের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানানো হয়েছে, একাধিক এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় শহরে স্বাভাবিক চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য হেল্পলাইন নম্বরও খোলা হয়েছে।
পুরসভার তৎপরতা
বৃহন্মুম্বই পুরসভা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা জল দ্রুত সরাতে পাম্প বসানো হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে পুরসভার কর্মীরা লাগাতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিমানবন্দর এবং প্রধান রেললাইন থেকে জল সরানোর চেষ্টা চলছে। তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
শহরের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব
বৃষ্টির কারণে শুধু বিমান বা রেল নয়, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অফিসযাত্রীদের যেতে হয়েছে দীর্ঘ যানজটের মধ্যে দিয়ে। স্কুল-কলেজের অনেক জায়গায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
আগামীর শঙ্কা
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে মুম্বই ও আশপাশে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা। সাধারণ মানুষকে তাই এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে।
উপসংহার
আর্থিক রাজধানী মুম্বইয়ের উপর প্রকৃতির এই ভয়াবহ রূপ ফের একবার শহরের দুর্বল পরিকাঠামোকে সামনে এনে দিল। বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া রেললাইন, ভেঙে পড়া আবাসন কিংবা বিমানবন্দরে জমে যাওয়া জল—সবটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় শহরের আরও প্রস্তুতি প্রয়োজন। আপাতত শহরবাসী কেবল অপেক্ষা করছে বৃষ্টির দাপট কমার জন্য।