ভারতে দ্রুত বর্ধনশীল অনলাইন রোম্যান্স স্ক্যামের ঘটনাগুলি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলির উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক ৬৩ বছর বয়সী ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে ডেটিংয়ের অজুহাতে প্রতারিত হয়ে ₹৩২.২ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মানুষকে সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক যোগাযোগ থেকে দূরে থাকার আবেদন জানিয়েছেন।
অনলাইন রোম্যান্স স্ক্যাম: বেঙ্গালুরুতে এক ৬৩ বছর বয়সী ব্যক্তির সাথে হোয়াটসঅ্যাপে রোম্যান্সের নামে ₹৩২.২ লক্ষ টাকার প্রতারণা হয়েছে। সাইবার অপরাধীরা নিজেদের হাই-প্রোফাইল ডেটিং সার্ভিসের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন ফি এবং পরে মেম্বারশিপ, আইনি ফি ও যাতায়াত খরচের নামে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সারা দেশে এমন অনলাইন রোম্যান্স ফ্রডের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে।
হোয়াটসঅ্যাপে রোম্যান্সের নামে ৩২ লক্ষ টাকার প্রতারণা
ভারতে অনলাইন রোম্যান্স স্ক্যাম এখন সাইবার অপরাধের একটি নতুন এবং দ্রুত বিস্তারশীল হুমকি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে এক ৬৩ বছর বয়সী ব্যক্তি এর শিকার হয়েছেন, যিনি হোয়াটসঅ্যাপে ডেটিংয়ের নামে ₹৩২.২ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। এই ঘটনাটি একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ যে, সাইবার প্রতারকরা এখন আবেগকে কতটা ব্যবহার করছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতারক হোয়াটসঅ্যাপে ভুক্তভোগী ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে নিজেকে "হাই-প্রোফাইল ডেটিং সার্ভিস"-এর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেয়। রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ₹১,৯৫০ চাওয়া হয় এবং তিনজন মহিলার ছবি পাঠানো হয়। কথোপকথন এগিয়ে যায় এবং ভুক্তভোগী একজন মহিলার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন। কয়েক দিনের মধ্যেই একটি বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যার পরে মেম্বারশিপ আপগ্রেড, আইনি নথি এবং যাতায়াত খরচের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন রোম্যান্স স্ক্যামের জাল
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে রোম্যান্স স্ক্যামের জাল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতারকরা প্রথমে বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর মানসিক সংযুক্তির সুযোগ নিয়ে টাকা চাইতে শুরু করে। অনেক সময় তারা তাদের শিকারকে ব্ল্যাকমেইল করে বা আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে আরও টাকা বের করে নেয়।
ভারতে ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে এই অপরাধগুলির সংখ্যাও বেড়েছে। গত কয়েক মাসে ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যাম এবং অনলাইন রোম্যান্স ফ্রডের ঘটনায় বড় ধরনের বৃদ্ধি দেখা গেছে। পুলিশ এবং সাইবার সেল ক্রমাগত মানুষকে সতর্ক করছে যে, কোনো অজানা নম্বরে বা ব্যক্তির উপর বিশ্বাস করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নিন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, রোম্যান্স স্ক্যামে প্রতারকরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের নিশানা করে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া বা চ্যাট অ্যাপে সক্রিয় থাকে। অনেক সময় তারা বিদেশি নাম এবং প্রোফাইল ফটো ব্যবহার করে বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, কোনো অজানা ব্যক্তিকে টাকা বা ব্যাংক বিবরণী কখনোই পাঠাবেন না। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ওটিপি বা ছবি শেয়ার করবেন না এবং পরিচয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিও কলের সাহায্য নিন।
যদি কারো অনলাইন লাভ ট্র্যাপের সন্দেহ হয়, তাহলে অবিলম্বে cybercrime.gov.in-এ অভিযোগ দায়ের করা উচিত। দ্রুত রিপোর্ট করলে টাকা ট্র্যাক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং অন্য মানুষদেরও রক্ষা করা যেতে পারে।
বাড়তে থাকা ঘটনাগুলি উদ্বেগ বাড়িয়েছে
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সারা দেশের সাইবার থানাগুলিতে এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে ভুক্তভোগীরা ৫ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খুইয়েছেন। অনেক সময় ভুক্তভোগীরা লজ্জা বা সামাজিক ভয়ের কারণে অভিযোগ করেন না। এর ফলে অপরাধীদের নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে অনলাইন প্রতারণার ঘটনায় ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে এবং এর একটি বড় অংশ রোম্যান্স স্ক্যামের অন্তর্গত।













