অনলাইন স্টক মার্কেট স্ক্যাম: দক্ষিণ দিনাজপুরের শিক্ষক খোয়ালেন ১৬ লক্ষ টাকা, তদন্তে পুলিশ

অনলাইন স্টক মার্কেট স্ক্যাম: দক্ষিণ দিনাজপুরের শিক্ষক খোয়ালেন ১৬ লক্ষ টাকা, তদন্তে পুলিশ

অনলাইন স্টক মার্কেট প্রতারণা: দক্ষিণ দিনাজপুরের শিক্ষক জাকির সরকার ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেই বিপদের মুখে পড়েন। রাজীব নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে তাঁর পরিচয় হয় তন্বী দেশপান্ডে নামে এক মহিলার সঙ্গে, যিনি একটি ভুয়ো ফান্ডে লগ্নি করার প্রলোভন দেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। প্রতারণা টের পেয়ে তিনি সরাসরি অভিযোগ দায়ের করেন দক্ষিণ দিনাজপুর সাইবার ক্রাইম থানায়।

ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে শুরু বিপত্তি

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৪ জুলাই। ফেসবুকে ভেসে ওঠা একটি বিজ্ঞাপন—“স্টক মার্কেট লার্নিং”—কৌতূহলবশত ক্লিক করেন শিক্ষক জাকির সরকার। সেখানেই তাঁর যোগাযোগ হয় রাজীব নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। প্রথমদিকে বিনিয়োগের নানা মুনাফার আশ্বাস দেন রাজীব। পরে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সহকারী পরিচয়ে তন্বী দেশপান্ডে নামে এক মহিলার সঙ্গে।তন্বী হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা চালাচালি শুরু করেন এবং জাকিরবাবুকে বোঝান যে ‘প্রেমজি ইনভেস্টমেন্ট ইক্যুইটি ফান্ড’-এ লগ্নি করলে তিনি বিপুল মুনাফা পাবেন। আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তাঁকে একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোডের লিঙ্ক পাঠানো হয়।

ধাপে ধাপে টাকার লেনদেন

প্রথমে খানিকটা দ্বিধা থাকলেও, বারবার প্রলোভনের পর জাকিরবাবু অ্যাপটি ডাউনলোড করে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। প্রতারকরা তাঁর অ্যাকাউন্টে ভার্চুয়াল ব্যালান্স দেখাতে থাকেন—প্রথমে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা, পরে একটি আইপিওর নাম করে ৪৫ লক্ষ টাকার সম্পদের প্রতিশ্রুতি দেন।কিন্তু ওই অর্থ তুলতে হলে আবার নতুন করে টাকা জমা দেওয়ার শর্ত দেন প্রতারকরা। এখানেই সন্দেহ তৈরি হয়। বুঝতে পারেন সবটাই প্রতারণার ফাঁদ।

পুলিশের দ্বারস্থ শিক্ষক

প্রতারিত হয়েছেন বুঝে শিক্ষক সোজা চলে যান দক্ষিণ দিনাজপুর সাইবার ক্রাইম থানায়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ডিএসপি সদর দফতর বিক্রম প্রসাদ বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়মিত সচেতন করার চেষ্টা করছি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সতর্কবার্তা ছড়ানো হচ্ছে, স্কুল-কলেজে সচেতনতা শিবির হচ্ছে। কেউ প্রতারিত হলে, কী করতে হবে, তা বোঝানো হচ্ছে।”তবে এখনও পর্যন্ত শিক্ষক জাকির সরকার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি।

প্রতারণার কৌশল

সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের ভুয়ো বিজ্ঞাপন ও প্রলোভনের ফাঁদ আগেও দেখা গেছে। প্রথমে সামান্য অর্থ জমা দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করা হয়, তারপর ধাপে ধাপে মোটা টাকা হাতানো হয়। ভার্চুয়াল ব্যালান্স ও আইপিওর প্রলোভন আসলে একেবারে ভুয়ো।

সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কবার্তা

প্রশাসন বারবার সতর্ক করছে—অপরিচিত কোনো বিজ্ঞাপন বা লিঙ্কে ক্লিক না করতে। বিশেষত যেসব বিজ্ঞাপন অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেগুলি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার শিকার হলে অবিলম্বে থানায় বা সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ জানাতে হবে।

অনলাইন স্টক মার্কেট প্রতারণা: দক্ষিণ দিনাজপুরের এক শিক্ষক ফেসবুক বিজ্ঞাপনের সূত্রে প্রতারকদের জালে পা দিয়ে খুইয়েছেন ১৬ লক্ষ টাকা। ‘প্রেমজি ইনভেস্টমেন্ট ইক্যুইটি ফান্ড’-এ লগ্নির প্রলোভনে ফাঁদে ফেলেন প্রতারকরা। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সচেতনতার বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।

 

Leave a comment