জি৭-এর কাছে ভারতের উপর শুল্ক আরোপের অনুরোধ আমেরিকার

জি৭-এর কাছে ভারতের উপর শুল্ক আরোপের অনুরোধ আমেরিকার

আমেরিকা জি৭ দেশগুলির কাছে রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপ করার অনুরোধ করেছে, যার ফলে ভারতের উপরও একই ধরনের শুল্ক প্রযোজ্য হতে পারে। আমেরিকার মতে, ভারত রাশিয়ার তেল কিনে তাদের যুদ্ধ মেশিনকে সাহায্য করছে। জি৭ অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনও দেশের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

জি৭: মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বোসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার জি৭ অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপের অনুরোধ করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো মস্কোর যুদ্ধ মেশিনকে অর্থ সরবরাহকারী উৎস বন্ধ করা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। আমেরিকা ভারত ও চীনের উপর ক্রমাগত রাশিয়া থেকে তেল কেনার অভিযোগ করেছে, যদিও এখনও পর্যন্ত চীনের উপর কোনও শুল্ক আরোপ করা হয়নি।

আমেরিকার দাবি এবং ভারতের উপর প্রভাব

আমেরিকার মতে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে পরোক্ষভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ মেশিনকে সহযোগিতা করছে। এই কারণেই আমেরিকা জি৭ দেশগুলিকে আহ্বান জানিয়েছে যে তারাও যেন ভারতের উপর একই ধরনের শুল্ক আরোপ করে যা আমেরিকা করেছে। এর ফলে ভারত সহ অন্যান্য দেশগুলিকে আর্থিক চাপের সম্মুখীন হতে হবে। যদিও মার্কিন প্রতিনিধি বাণিজ্য চুক্তি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভারতে এসেছেন এবং ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টা করেছেন।

জি৭ দেশগুলির বৈঠক

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বোসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জেমিসন গ্রিয়ার জি৭ অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। কানাডার অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেনের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমণ শেষ করা এবং রাশিয়ার উপর চাপ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি

আমেরিকার মতে, কেবল সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই রাশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিকে সীমিত করা সম্ভব। বোসেন্ট বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন যে জি৭ দেশগুলি যদি সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চায়, তবে তাদের রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপে আমেরিকার সমর্থন করা উচিত। বিবৃতিতে কোনও দেশের নাম নেওয়া হয়নি, তবে আমেরিকা প্রায়শই ভারত এবং চীনের উপর রাশিয়া থেকে তেল কেনার অভিযোগ করে আসছে। যদিও চীনের উপর আমেরিকা এখনও পর্যন্ত কোনও শুল্ক আরোপ করেনি।

জি৭ দেশগুলির ভূমিকা

জি৭-তে আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং ব্রিটেন অন্তর্ভুক্ত। এই গোষ্ঠীটি সমৃদ্ধ এবং শিল্পোন্নত দেশগুলির একটি আন্তঃসরকারি সংগঠন। এই বছর জি৭-এর সভাপতিত্ব করছে কানাডা। আমেরিকার আহ্বানের পর জি৭ দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপর কীভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে।

ভারতের উপর সম্ভাব্য চাপ

যদি জি৭ দেশগুলি আমেরিকার অনুরোধ গ্রহণ করে, তবে ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্কের সম্মুখীন হতে হতে পারে। এর ফলে ভারতের তেল আমদানির উপর আর্থিক চাপ বাড়তে পারে এবং ভারতীয় শিল্পগুলিকে উচ্চ ব্যয়ের সম্মুখীন হতে হতে পারে। তবে, ভারত সবসময়ই তার জ্বালানি সুরক্ষা এবং বিদেশ নীতি বিবেচনা করে রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

আমেরিকা এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

মার্কিন প্রতিনিধি ভারতে এসেছেন এবং এই সময়ে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা করেছেন এবং ভারতের সাথে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি, আমেরিকা রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

বৈশ্বিক শক্তি বাজারে প্রভাব

আমেরিকা এবং জি৭ দেশগুলির এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক শক্তি বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপর শুল্ক আরোপ হলে তেলের দাম বাড়তে পারে এবং অন্যান্য দেশে জ্বালানি সংকট বাড়তে পারে। ভারত সহ রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলিকে এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত কৌশল অবলম্বন করতে হতে পারে।

Leave a comment