পানিফলের উপকারিতা: শীতের মরসুমে বাজারে দেখা মেলে নানা পুষ্টিকর ফলের, যার মধ্যে অন্যতম হলো পানিফল বা জলের বাদাম। জলে জন্মানো এই ফল শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। পুষ্টিবিদ অবনী কৌলের মতে, যদি কেউ টানা ১৫ দিন ধরে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে পানিফল খান, তবে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে, পাশাপাশি ওজনও নিয়ন্ত্রণে আসে।
কম ক্যালোরিতে ভরপুর পুষ্টিগুণ
পানিফলে ক্যালোরির পরিমাণ অত্যন্ত কম হলেও এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-৬ ও তামা। এই উপাদানগুলো হজমশক্তি বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরকে সারাদিন সতেজ রাখে। নিয়মিত পানিফল খেলে পেট ভরা অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে বিশেষ উপকার
পানিফলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর কম গ্লাইসেমিক সূচক। ফলে এটি শরীরে শর্করার মাত্রা ধীরে বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একই সঙ্গে, পানিফলের উচ্চ পটাসিয়াম হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই কারণেই পুষ্টিবিদেরা একে “হৃদরোগের প্রাকৃতিক মহৌষধ” বলে থাকেন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ত্বক ও চুলের যত্ন
পানিফলে থাকা সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত এই ফল খেলে ত্বক উজ্জ্বল থাকে, চুল মজবুত হয় এবং বার্ধক্যের ছাপও কিছুটা হ্রাস পায়। শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এটি এক প্রাকৃতিক প্রতিষেধক।
রোগ প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্য
জলের বাদাম বা পানিফল শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক মিনারেল ও ভিটামিন শরীরকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই শীতকালে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে পানিফল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, পানিফল সেদ্ধ বা হালকা ভাজা অবস্থায় খাওয়া সবচেয়ে ভালো। বেশি তেল বা মশলা দিয়ে ভাজা থেকে বিরত থাকা উচিত। সকালের জলখাবার বা সন্ধ্যার হালকা নাস্তায় এটি খাওয়া সবচেয়ে উপযোগী। কাঁচা অবস্থায় খেলে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি।
পানিফল খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য এক আশীর্বাদ। এই ফল শুধু ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণেই নয়, বরং ওজন কমানো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কার্যকর। পুষ্টিবিদদের মতে, ১৫ দিন ধরে নিয়মিত পানিফল খেলে শরীরে দেখা যায় আশ্চর্য পরিবর্তন।