আনারসের মৌসুমে যদি এক চুমুক সুস্থতার স্বাদ চায় শরীর, তবে আদা-আনারসের যুগলবন্দি হতে পারে পরম মিত্র। শুধুমাত্র ফলের স্বাদ নয়, বরং হজমশক্তি, রোগপ্রতিরোধ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ—সবকিছু সামলাতে পারে এই সহজ পানীয়। ওয়েলনেস ইনফ্লুয়েন্সরদের পরামর্শে এখন ডায়েটে আদা-আনারসের রস রাখার প্রবণতা বাড়ছে। বাজারে তাজা আনারস মিলছে এই সময়ে, সঙ্গে যোগ করুন কিছুটা আদা, তৈরি করুন একটি অনন্য হেলথ ড্রিঙ্ক, যার গুণাগুণ একাধিক।
হজমে সহায়তা, ব্রোমেলিন ও জিঞ্জারল মিলেই দেবে জাদু
আনারসে থাকা ব্রোমেলিন প্রোটিন হজমে সহায়তা করে। অন্যদিকে আদার প্রধান উপাদান ‘জিঞ্জারল’ হজমতন্ত্রকে শিথিল করে। দু’টি উপাদান একসঙ্গে খেলে হজমের গতি বাড়ে, পেট ফাঁপার সমস্যা কমে, এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি আহরণ আরও কার্যকর হয়। হজমজনিত সমস্যায় ভুগলে সকালে এই পানীয় খাওয়া যেতে পারে, বিশেষত খালি পেটে।
ওজন কমাতে চাইলে এড়াবেন না এই পানীয়
আনারসের ক্যালোরি খুবই কম, অথচ ফাইবারে ভরপুর। এতে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। আদা আবার থার্মোজেনিক উপাদান, যা দেহে তাপ উৎপন্ন করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। ফলে দু’টির সংমিশ্রণে শরীরের চর্বি ঝরার হার বেড়ে যায়। ওজন কমাতে চাইলে সকালের রুটিনে রাখতে পারেন এই পানীয়।
সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, ইনসুলিন কাজ করে কার্যকর
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি হতে পারে এক কার্যকর পানীয়। আদা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আনারস যদিও মিষ্টি, তবুও এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেকটাই কম, তাই এটি শর্করার আচমকা বৃদ্ধি ঘটায় না। নিয়মিত এই পানীয় খেলে ডায়াবেটিস ঝুঁকি অনেকাংশে কমে।
রোগ প্রতিরোধে ঢাল, সংক্রমণ আটকায় সহজে
আনারসে থাকা ভিটামিন সি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো কাজ করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আদার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সংক্রমণ এবং সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস আদা-আনারসের রস খেলে সিজনাল ভাইরাস, সংক্রমণ, ঠান্ডা-জ্বর অনেকটাই দূরে রাখা সম্ভব।
শরীর থেকে টক্সিন দূর, এনার্জি বাড়ায় অনায়াসে
আদা-আনারসের রস লিভার ও কিডনিকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। টক্সিন মুক্ত হলে শরীরের সার্বিক কর্মক্ষমতা বাড়ে। ক্লান্তি, অলসতা দূর হয় এবং কাজ করার ইচ্ছা তৈরি হয়। বিশেষত যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তাঁদের জন্য এটি হতে পারে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক।
হৃদরোগের ঝুঁকি কম, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
আনারসে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। অন্যদিকে আদা হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এই পানীয় নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। উচ্চ রক্তচাপ বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আদা-আনারস হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।সুস্বাদু আবার স্বাস্থ্যকর—এই দুইয়ের সংমিশ্রণেই আদা-আনারসের জুস হয়ে উঠছে বর্ষার নতুন সুপারড্রিঙ্ক। শুধু বর্ষা নয়, সারা বছর এই পানীয় রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়। নিয়মিত খাওয়া মানেই রসনার সঙ্গে স্বাস্থ্যরক্ষা—দু’টিই একসঙ্গে।