পিতৃপক্ষ ২০২৫ সালের শুরু হচ্ছে এই বছর ৭ই সেপ্টেম্বর, রবিবার। বিশেষ বিষয় হল, এই দিনেই বছরের দ্বিতীয় পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণও লাগছে যা ভারত সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাতে দেখা যাবে। এই কারণে এই বারের পিতৃপক্ষ জ্যোতিষ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই বিশেষ বলে মনে করা হচ্ছে। পিতৃপক্ষের সমাপ্তি হবে ২১শে সেপ্টেম্বর, সর্ব পিতৃ অমাবস্যার দিনে।
শ্রাদ্ধপক্ষে তর্পণ, পিণ্ডদান ও ব্রাহ্মণ ভোজনের গুরুত্ব
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, পিতৃপক্ষের ১৫ দিন ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরা পৃথিবীতে আসেন এবং এই দিনগুলিতে তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ, তর্পণ ও পিণ্ডদান করলে তাঁরা শান্তি ও মোক্ষ লাভ করেন। যারা এই কাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে করেন, তাঁদের উপর পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ বজায় থাকে। এই সময়কে শ্রাদ্ধ পক্ষ, মহালয় পক্ষ বা শুধুমাত্র পিতৃপক্ষও বলা হয়।
গ্রহণের দিনে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
৭ই সেপ্টেম্বর পূর্ণিমা শ্রাদ্ধের সঙ্গেই চন্দ্রগ্রহণও রয়েছে, যার সূতক দুপুর ১২:৫৭ থেকে শুরু হয়ে যাবে। ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে সূতক লাগার পরে কোনও পূজা-পাঠ, তর্পণ বা শ্রাদ্ধ করা যায় না, তাই ওই দিন পূর্ণিমা শ্রাদ্ধ যারা করবেন তাদের দুপুর বারোটার আগে সমস্ত কাজ শেষ করতে হবে।
শ্রাদ্ধ ও তর্পণ কিভাবে করবেন?
- সময়: তর্পণ ও পিণ্ডদানের সবচেয়ে শুভ সময় হল মধ্যাহ্ন (বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে)।
- বিধি: তর্পণের জন্য তিল, কুশ, জল এবং যব ব্যবহার করা হয়। এটি দক্ষিণ দিকে মুখ করে করা হয় কারণ মনে করা হয় যে পিতৃপুরুষদের বাস দক্ষিণ দিকে।
- পিণ্ডদান: সেদ্ধ চাল, তিল এবং যব দিয়ে পিণ্ড তৈরি করে ভূমিতে অর্পণ করা হয়। এর সাথে "ওঁ পিতৃভ্যঃ স্বাহা" এই মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়।
কোথায় পিণ্ডদান করা উচিত?
গয়া (বিহার), প্রয়াগরাজ (উত্তর প্রদেশ), হরিদ্বার (উত্তরাখণ্ড), নাসিক (মহারাষ্ট্র), সিদ্ধপুর (गुजरात) এর মত তীর্থস্থানগুলিকে পিণ্ডদানের জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু যদি কেউ এই স্থানগুলিতে যেতে না পারেন তবে বাড়িতেও পিণ্ডদান ও তর্পণ করা যেতে পারে।
কোন তিথিতে কোন শ্রাদ্ধ করা উচিত?
শ্রাদ্ধ পক্ষের প্রতিটি তিথিতে একটি বিশেষ শ্রাদ্ধ হয়। নিচে দেওয়া তালিকায় জেনে নিন কোন তারিখে কোন পূর্বপুরুষের জন্য শ্রাদ্ধ করা হয়:
- ৭ই সেপ্টেম্বর: পূর্ণিমা শ্রাদ্ধ
- ৮ই সেপ্টেম্বর: প্রতিপদ শ্রাদ্ধ
- ৯ই সেপ্টেম্বর: দ্বিতীয়া শ্রাদ্ধ
- ১০ই সেপ্টেম্বর: তৃতীয়া ও চতুর্থী শ্রাদ্ধ
- ১১ই সেপ্টেম্বর: পঞ্চমী শ্রাদ্ধ
- ১২ই সেপ্টেম্বর: ষষ্ঠী শ্রাদ্ধ
- ১৩ই সেপ্টেম্বর: সপ্তমী শ্রাদ্ধ
- ১৪ই সেপ্টেম্বর: অষ্টমী শ্রাদ্ধ
- ১৫ই সেপ্টেম্বর: নবমী শ্রাদ্ধ
- ১৬ই সেপ্টেম্বর: দশমী শ্রাদ্ধ
- ১৭ই সেপ্টেম্বর: একাদশী শ্রাদ্ধ
- ১৮ই সেপ্টেম্বর: দ্বাদশী শ্রাদ্ধ
- ১৯শে সেপ্টেম্বর: ত্রয়োদশী শ্রাদ্ধ
- ২০শে সেপ্টেম্বর: চতুর্দশী শ্রাদ্ধ
- ২১শে সেপ্টেম্বর: সর্বপিতৃ অমাবস্যা
- ২২শে সেপ্টেম্বর: মাতামহ (দাদু-দিদা) শ্রাদ্ধ
পিতৃ দোষ কী এবং এর লক্ষণগুলি কীভাবে চিনবেন?
মনে করা হয় যাদের পূর্বপুরুষদের বিধিपूर्वक শ্রাদ্ধ করা হয় না, তাদের পিতৃ দোষ লাগে। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- বারবার জীবনে বাধা আসা
- সন্তান প্রাপ্তিতে সমস্যা
- পারিবারিক কলহ বা অশান্তি
- বিনা কারণে মানসিক চাপ বা আর্থিক সংকট
পিতৃ দোষ থেকে মুক্তির কিছু উপায়
- গীতা পাঠ করুন: বিশেষ করে ভগবদ্গীতার ১৫তম অধ্যায় পাঠ করলে পিতৃপুরুষদের শান্তি মেলে।
- ব্রাহ্মণ ভোজন: কোনও যোগ্য ব্রাহ্মণকে ভোজন করানো এবং দান করা খুব পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়।
- কুকুর, গরু ও কাককে খাবার দেওয়া: মনে করা হয় যে পিতৃপক্ষে এই প্রাণীগুলোকে খাবার দিলে পিতৃপুরুষরা তৃপ্তি পান।
- তিল ও জল দিয়ে অর্ঘ্য: সূর্যোদয়ের পর পবিত্র জলে তিল মিশিয়ে পিতৃপুরুষদের অর্ঘ্য নিবেদন করা উচিত।
পিতৃপক্ষে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না?
পিতৃপক্ষের সময় কিছু ধর্মীয় নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। এই সময়ে বিয়ে, গৃহপ্রবেশ, মুন্ডন, নামকরণ-এর মতো শুভ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়াও মাংস-মদ এবং রসুন-পেঁয়াজ খাওয়াও নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। এই সময়টি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সংযমের সাথে পিতৃপুরুষদের নামে উৎসর্গ করা উচিত।