উত্তরাখণ্ডের কেশব সাক্সেনা লোহার ১২টি শিকলে নিজেকে বেঁধে রিঙ্গাস থেকে খাটু শ্যাম পর্যন্ত ১৮ কিমি পদযাত্রা করেন এবং বাবার কাছে প্রার্থনা করেন যেন ভারতবর্ষ থেকে সম্পূর্ণরূপে মাংসাহার নিষিদ্ধ করা হয়।
Khatu Shyam: রাজস্থানের খাটুধামে এক অভূতপূর্ব এবং আবেগপূর্ণ দৃশ্য দেখা গেল যখন এক যুবক লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় বাবা শ্যামের দরবারে পৌঁছন। তিনি কোনো সাধারণ ভক্ত ছিলেন না, বরং এমন এক ভক্ত ছিলেন, যাঁর পুরো যাত্রা একটি সামাজিক বার্তা এবং ভক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উত্তরাখণ্ডের ২১ বছর বয়সী কেশব কুমার সাক্সেনা খাটুশ্যামজি পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা খালি পায়ে এবং ১০ কেজি ওজনের লোহার ১২টি শিকলে নিজেকে বেঁধে সম্পন্ন করেন। অন্ন এবং জল ছাড়া ২৭ ঘণ্টার এই তপস্যা কেবল ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা নয়, বরং একটি দেশব্যাপী আবেদন হিসাবে সামনে এসেছে – 'ভারতবর্ষে মাংসাহারের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।'
ভক্তির এক অসাধারণ রূপ: শিকলে মোড়া শরীর
রাজস্থানের সিকার জেলায় অবস্থিত খাটু শ্যাম মন্দির চত্বর সেই সময় ভক্তিভাবে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন এক যুবক লোহার ভারী শিকলে বাঁধা অবস্থায় বাবা শ্যামের দরবারে পৌঁছন। প্রথমে ভক্তরা অবাক হয়ে যান, কিন্তু যখন তাঁর সংকল্প এবং উদ্দেশ্যের কথা জানতে পারেন, তখন সকলের চোখ ভিজে যায়। যুবকের নাম ছিল কেশব কুমার সাক্সেনা, বয়স মাত্র ২১ বছর।
১২ বছর ধরে বাবা শ্যামের অনন্য ভক্ত
উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর নিবাসী কেশব গত ১২ বছর ধরে প্রতি বছর খাটু শ্যামজির দর্শনের জন্য আসেন। কিন্তু এইবারের যাত্রা শুধু একটি তীর্থ ছিল না, এটি একটি সামাজিক আওয়াজ, একটি আবেগপূর্ণ যাত্রা এবং একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তিনি নিজেকে ১০ কেজি ওজনের ১২টি লোহার শিকলে বেঁধে রিঙ্গাস থেকে খাটু পর্যন্ত ১৮ কিমি পথ না খেয়ে-দেয়ে একটানা ২৭ ঘণ্টায় অতিক্রম করেন।
কানহাইয়া মিত্তলের সভা থেকে মন হয়েছিল বিচলিত
কেশবের বক্তব্য হল, তিনি সম্প্রতি ভজন গায়ক কানহাইয়া মিত্তলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য হলদোয়ানি যাচ্ছিলেন। পথে তিনি অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে মাংস কাটতে ও খেতে দেখেন। এই দৃশ্য দেখে তাঁর মন অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তিনি তখনই প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি বাবা শ্যামের দরবারে গিয়ে দেশে মাংসাহারের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানাবেন।
ছেলেবেলায় বাবা শ্যামের আশ্রয় লাভ
আবেগপ্রবণ হয়ে কেশব জানান যে যখন তাঁর বয়স ৯ বছর ছিল, তখন তাঁর বাবা-মা আলাদাভাবে বিবাহ করেন এবং তাঁকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে চলে যান। সেই অন্ধকার সময়ে তিনি খাটু শ্যামজির দরবারে আশ্রয় পান। প্রথমবার যখন তিনি বাবার দরবারে পৌঁছন, তখন তাঁর মনে হয়েছিল যেন তিনি একটি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। তখন থেকেই তিনি বাবার পরম ভক্ত হয়ে ওঠেন।
শুধু সংকল্প নয়, সমাজের জন্য বার্তা
কেশবের এই প্রচেষ্টা কেবল একজন ভক্তের বিশ্বাস নয়, বরং সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তাঁর বক্তব্য, মাংসাহার কেবল হিংসা নয়, মানবতার বিরুদ্ধেও বটে। তিনি বাবা শ্যামের কাছে এই দাবি জানান যে ভারত-এর মতো আধ্যাত্মিক দেশে মাংসাহারের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং আগামী প্রজন্মকে শুদ্ধ ও সংবেদনশীল জীবন যাপনের সুযোগ দেওয়া হোক।
ভক্তি ও আত্মত্যাগের সংমিশ্রণ
এই সংকল্প যাত্রায় কেশব কেবল শারীরিক কষ্টের মধ্যে দিয়েই যাননি, মানসিক ভাবেও অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন। ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থেকেও তিনি এক মুহূর্তের জন্যেও টলেননি। খাটু শ্যাম মন্দিরে পৌঁছানোর পরেই তিনি বাবার চরণে মাথা নত করে কেবল একটি বাক্যই বলেছিলেন – 'বাবা, ভারতকে মাংসাহার থেকে মুক্ত করো।'
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল
কেশবের এই অনন্য যাত্রা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ তাঁর উদ্যোগের প্রশংসা করছেন এবং অনেক সংগঠন তাঁর এই দাবির সমর্থন করছেন। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে এই ধরনের আবেদনগুলির গুরুত্ব বিবেচনা করার জন্য আবেদন জানানোর কথাও বলেছেন।
আস্থায় শক্তি, পরিবর্তনের স্ফুলিঙ্গ
কেশব সাক্সেনার এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে একজন সত্যিকারের ভক্ত যখন সমাজের জন্য কিছু ভাবেন, তখন তাঁর আস্থা শুধু পূজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা পরিবর্তনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে। তাঁর এই শিকলে বাঁধা পদযাত্রা, ভবিষ্যতে শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক হবে না, বরং এই বার্তাও দেবে যে মনে বিশ্বাস থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।