কিছু লোকের প্লেটলেটের সংখ্যা জন্ম থেকেই ১ থেকে ১.৫ লক্ষের মধ্যে থাকে, যাকে Constitutional Thrombocytopenia বলা হয়। এটি বিপজ্জনক নয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। বিপদ তখনই হয় যখন প্লেটলেট ১ লক্ষের নিচে নেমে যায় বা রক্তের অন্যান্য প্যারামিটারগুলিও প্রভাবিত হয়, তখন আরও পরীক্ষা এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
প্লেটলেটের কাজ ও গুরুত্ব: রক্ত জমাট বাঁধতে এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্য প্লেটলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক মাত্রা হল ১.৫ থেকে ৪.৫ লক্ষ প্রতি মাইক্রোলিটার, তবে কিছু লোকের ক্ষেত্রে এটি জন্ম থেকেই ১-১.৫ লক্ষের মধ্যে স্থির থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একে Constitutional Thrombocytopenia বলা হয় এবং এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর বিপদের আশঙ্কা থাকে না। তবে, যদি প্লেটলেট ১ লক্ষের নিচে নেমে যেতে শুরু করে বা হিমোগ্লোবিন ও টিএলসি-ও কমে যায়, তাহলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের মতো রোগের পরীক্ষা করা হয়। গুরুতর অভাবের ক্ষেত্রে বোন ম্যারো পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
প্লেটলেটের কাজ কী
প্লেটলেট রক্তের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্লেটলেট হল বোন ম্যারো অর্থাৎ অস্থিমজ্জাতে তৈরি হওয়া ক্ষুদ্র কোষ। এদের সবচেয়ে বড় কাজ হল আঘাত লাগলে রক্ত জমাট বাঁধতে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করা। প্লেটলেট না থাকলে রক্তপাত বন্ধই হবে না। এই কারণেই প্লেটলেটের সংখ্যা খুব কমে গেলে জীবনের ঝুঁকিও হতে পারে।
সাধারণ মাত্রা কত হওয়া উচিত
একজন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্লেটলেটের সংখ্যা সাধারণত দেড় লক্ষ থেকে সাড়ে চার লক্ষ প্রতি মাইক্রোলিটার এর মধ্যে থাকে। যদি এই মাত্রা ২০ থেকে ৩০ হাজারের নিচে নেমে যায় তবে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। অন্যদিকে, যদি এই সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে থাকে তবে রোগীর রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে এবং ডাক্তার দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন।
কেন প্লেটলেট কমে যায়
ম্যাক্স হাসপাতালের হেমাটোলজিস্ট এবং অনকোলজিস্ট ডঃ রোহিত কাপুর বলেছেন যে প্লেটলেট কমার অনেক কারণ রয়েছে। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, লিউকেমিয়া এবং মায়লোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমের মতো রোগগুলি বোন ম্যারোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে প্লেটলেট তৈরির ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও ফোলেট এবং ভিটামিন বি১২ এর অভাবও প্লেটলেট গঠনে প্রভাব ফেলে।
কিছু ভাইরাল সংক্রমণ যেমন হেপাটাইটিস সি এবং এইচআইভি-ও বোন ম্যারোতে প্রভাব ফেলে এবং প্লেটলেটের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সেপসিস অর্থাৎ রক্তের সংক্রমণও প্লেটলেট কমাতে পারে।
মাত্রার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা
ডঃ রোহিত বলেছেন যে প্লেটলেটের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রোগীদের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যদি মাত্রা ১.৫ লক্ষের উপরে থাকে তবে এটিকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। ১ লক্ষ ১ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ পর্যন্ত হালকা অভাব বলে মনে করা হয় এবং এতে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কেবল প্রতি তিন মাসে একবার নিরীক্ষণ করতে হয়।
যদি মাত্রা ৫১ হাজার থেকে ১ লক্ষের মধ্যে থাকে তবে এটিকে মাঝারি অভাব বলে মনে করা হয় এবং রোগীর প্রতি মাসে পরীক্ষা করা হয়। ৫০ হাজারের কম হওয়া গুরুতর অবস্থা বলে মনে করা হয়, অন্যদিকে ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে রোগীর রক্তপাত এবং জীবনের ঝুঁকি থাকে।
জন্ম থেকেই প্লেটলেট কম কেন থাকে
অনেকের প্লেটলেটের সংখ্যা জন্ম থেকেই ১ থেকে দেড় লক্ষের মধ্যে থাকে। এটিকে মেডিকেল ভাষায় কনস্টিটিউশনাল থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বলা হয়। এই ধরনের লোকদের মধ্যে বছরের পর বছর এই সংখ্যাটি একই থাকে এবং এতে কোনো বিপদের কথা থাকে না। এদের বোন ম্যারো স্বাভাবিকভাবে কাজ করে এবং প্লেটলেটগুলিও রক্ত জমাট বাঁধার কাজটি সঠিকভাবে করে।
কখন উদ্বেগের বিষয়
যদি কোনো ব্যক্তির প্লেটলেট ১ লক্ষের কম হয় এবং এর সাথে হিমোগ্লোবিন এবং টিএলসি-ও কমতে থাকে তবে ডাক্তাররা গভীর পরীক্ষা করেন। যদি প্লেটলেটের মাত্রা ক্রমাগত কমতে থাকে তবে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই সময়ে বোন ম্যারো পরীক্ষাও করা হয় যাতে জানা যায় যে রক্ত ক্যান্সার বা অন্য কোনো গুরুতর রোগ তো নেই।