গর্ভাবস্থার পর হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থার পর হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থার পর মহিলাদের হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। এর কারণ হতে পারে পুষ্টির অভাব যেমন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাব, অথবা এটি পোস্টপার্টাম আর্থ্রাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে। সময়মতো সঠিক খাদ্য, রোদ এবং হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।

হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা: গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের পর মহিলাদের শরীরে হরমোনগত ও শারীরিক পরিবর্তন আসে, যার ফলে হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা হওয়া সাধারণ। আরএমএল হাসপাতালের ড. সালোনি চাধার মতে, এই ব্যথা পুষ্টির অভাব বা আর্থ্রাইটিসের শুরুর ইঙ্গিত হতে পারে। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিনের অভাব পেশী ও হাড়কে দুর্বল করতে পারে, অন্যদিকে ক্রমাগত ব্যথা, ফোলা এবং সকালের আড়ষ্টতা পোস্টপার্টাম আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। সঠিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

প্রসবের পর শরীরের পরিবর্তন

প্রসবের পর মহিলার শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যার ফলে হাড়ের শক্তি হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে, শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়। যদি খাদ্যের মাধ্যমে এর পূরণ না হয়, তাহলে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন এবং জয়েন্টের উপর চাপও ব্যথার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘক্ষণ ক্লান্তি, ঘুমের অভাব এবং শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়া পুনরুদ্ধারকে প্রভাবিত করে।

হাড় ও জয়েন্টে ব্যথার প্রধান কারণ

ড. সালোনি চাধার মতে, গর্ভাবস্থার পর হাড় ও জয়েন্টে ব্যথার দুটি প্রধান কারণ হতে পারে। প্রথমত, পুষ্টির অভাব। যদি মহিলার খাদ্যে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়রন এবং প্রোটিনের অভাব থাকে, তাহলে হাড় ও পেশী দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলস্বরূপ সামান্য নড়াচড়াতেও ব্যথা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত পুষ্টির অভাবের সাথে সম্পর্কিত এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, পোস্টপার্টাম আর্থ্রাইটিস। যদি ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, জয়েন্টে ফোলা বা আড়ষ্টতা থাকে এবং সকালে ওঠার সময় শরীর শক্ত বা আড়ষ্ট অনুভূত হয়, তাহলে এটি আর্থ্রাইটিসের ইঙ্গিত হতে পারে। এই অবস্থা শরীরে প্রদাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে ঘটে। সঠিক পরীক্ষার জন্য ডাক্তার রক্ত ​​পরীক্ষা, এক্স-রে বা অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষার পরামর্শ দেন। সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।

কোন লক্ষণগুলি গুরুতরতা নির্দেশ করে

  • চোখে হালকা ব্যথা বা ভারী ভাবের মতো সাধারণ লক্ষণ।
  • জয়েন্টে ফোলা এবং আড়ষ্টতা।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর শক্ত বা আড়ষ্ট অনুভূত হওয়া।
  • দীর্ঘক্ষণ ব্যথা থাকা বা ব্যথা বাড়তে থাকা।
  • ক্লান্তি, ঘুমের অভাব এবং হালকা শারীরিক কার্যকলাপের পরেও ব্যথা।

এই লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করলে হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে পারে।

প্রসবের পর হাড়ের যত্ন

  • প্রতিদিন রোদ পোহান যাতে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায়।
  • খাদ্যতালিকায় দুধ, দই, পনির, সবুজ শাকসবজি এবং ড্রাই ফ্রুটস অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • হালকা ব্যায়াম বা যোগা করুন যাতে জয়েন্টে আড়ষ্টতা না হয়।
  • দীর্ঘক্ষণ ব্যথা বা ফোলা থাকলে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করান।
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিন, কারণ শরীরের পুনরুদ্ধারের জন্য সময় প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থার পর হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। এটি কখনো পুষ্টির অভাবের ইঙ্গিত হতে পারে, আবার কখনো আর্থ্রাইটিসের মতো গুরুতর অবস্থার শুরু হতে পারে। তাই ব্যথার প্রকৃতি, এর সময়কাল এবং সংশ্লিষ্ট লক্ষণগুলি বিবেচনা করে সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা জরুরি। হাড়ের শক্তি বজায় রাখার জন্য সঠিক খাদ্য, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Leave a comment