প্রেমানন্দ মহারাজের সংস্কৃত জ্ঞান নিয়ে বিতর্ক: রামভদ্রাচার্যের সমালোচনা করলেন শঙ্করাচার্য অবিমুক্তেশ্বরানন্দ

প্রেমানন্দ মহারাজের সংস্কৃত জ্ঞান নিয়ে বিতর্ক: রামভদ্রাচার্যের সমালোচনা করলেন শঙ্করাচার্য অবিমুক্তেশ্বরানন্দ

জগদগুরু রামভদ্রাচার্য কর্তৃক বৃন্দাবনের সন্ত প্রেমানন্দ মহারাজের সংস্কৃত জ্ঞান নিয়ে করা মন্তব্যের জেরে বিতর্ক আরও বাড়ল। জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী রামভদ্রাচার্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, প্রেমানন্দজী দিনরাত ভগবানের নাম জপ করেন এবং সেটি স্বয়ং সংস্কৃত ভাষায়।

নয়াদিল্লি: জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য কর্তৃক বৃন্দাবনের সন্ত প্রেমানন্দ মহারাজকে নিয়ে করা মন্তব্য এখন সন্ত সমাজে গুরুতর বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী এই বিবৃতির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন যে প্রেমানন্দ মহারাজ দিনরাত ভগবানের নাম জপ করেন এবং তাঁর প্রতিটি শব্দ সংস্কৃতের সঙ্গে জড়িত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "যদি আপনি দেখতে না পান, তাহলে কি আপনি শুনতেও পান না?"

অবিমুক্তেশ্বরানন্দের বক্তব্য হল, প্রেমানন্দ মহারাজের জীবন ভগবানের নাম স্মরণ ও প্রচারে নিবেদিত। এমন একজন সন্তকে সংস্কৃত জ্ঞান না থাকার অভিযোগ করা उचित নয়।

অবিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেছেন ভগবানের নামই সংস্কৃত

স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দ প্রেমানন্দ মহারাজের সমর্থনে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে রাধে-রাধে, কৃষ্ণ-কৃষ্ণ, হে গোবিন্দ, হে গোপাল-এর মতো নাম শুধুমাত্র ভক্তির প্রতীক নয়, এগুলি সংস্কৃত ভাষার মূল শব্দ। তিনি বলেন, প্রেমানন্দ মহারাজ সারাদিন এই নামগুলি উচ্চারণ করেন এবং এইভাবে তিনি অজান্তেই সংস্কৃতের প্রচার করছেন।

তিনি কটাক্ষ করে বলেন, যদি কেউ দাবি করে যে প্রেমানন্দ মহারাজের সংস্কৃতের জ্ঞান নেই, তাহলে সম্ভবত তিনি শুনতে পান না যে এই সমস্ত নাম কোন ভাষা থেকে এসেছে।

রামভদ্রাচার্য প্রেমানন্দ মহারাজের পাণ্ডিত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন

এই বিতর্কের সূত্রপাত তখন হয় যখন জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য একটি পডকাস্টে প্রেমানন্দ মহারাজের পাণ্ডিত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেছিলেন যে যদি প্রেমানন্দ সংস্কৃতের একটি অক্ষরও বলতে পারেন বা তাঁর কোনো শ্লোকের অর্থ বুঝিয়ে দিতে পারেন, তবে তিনি তাঁকে অলৌকিক সন্ত হিসাবে মানবেন।

তাঁর এই মন্তব্যে সন্ত সমাজে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সন্ত এটিকে প্রেমানন্দ মহারাজের আধ্যাত্মিক ভাবমূর্তির উপর আক্রমণ বলে মনে করছেন। যদিও বিতর্ক বাড়তে দেখে রামভদ্রাচার্য সাফাই দিয়েছেন যে তিনি কোনও অভদ্র মন্তব্য করেননি এবং প্রেমানন্দ তাঁর পুত্রের সমান। তিনি আরও বলেন, যখনই প্রেমানন্দ মহারাজ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসবেন, তিনি তাঁকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করবেন।

অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতীর বক্তব্যে সন্ত সমাজে বড় প্রশ্ন উঠেছে

অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতীর তীব্র প্রতিক্রিয়া সন্ত সমাজে এই বড় প্রশ্নটি তুলেছে যে কোনও সন্তের পরিচয় তাঁর পাণ্ডিত্য দিয়ে হওয়া উচিত নাকি তাঁর ভক্তি দিয়ে। তাঁর বক্তব্য হল, প্রেমানন্দ মহারাজকে পাণ্ডিত্যের ভিত্তিতে বিচার করা ভুল, কারণ তাঁর জীবন ভক্তি ও সাধনার উদাহরণ।

অনেক বিদ্বান ও ভক্তের মতে, ভক্তিভাব স্বয়ং সবচেয়ে বড় বিদ্যা। যদি কোনও সন্ত ভক্তদের ঈশ্বরের নামের দিকে অনুপ্রাণিত করেন, তবে সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান। এই বিতর্ক আরও গভীর করে তুলেছে যে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় ভাষার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment