রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর রাফালে উড়ান: ভারতীয় বিমানবাহিনীর শক্তি ও আত্মনির্ভরতার প্রতীক

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর রাফালে উড়ান: ভারতীয় বিমানবাহিনীর শক্তি ও আত্মনির্ভরতার প্রতীক
সর্বশেষ আপডেট: 3 ঘণ্টা আগে

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বুধবার হরিয়ানার আম্বালা বিমানবাহিনীর স্টেশন থেকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান রাফালে (Rafale)-এ উড়তে চলেছেন। এই উড়ান কেবল একটি আনুষ্ঠানিক ঘটনা নয়, বরং ভারতীয় বিমানবাহিনীর শক্তি এবং জাতির প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। 

নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বুধবার হরিয়ানার আম্বালা বিমানবাহিনী স্টেশন থেকে রাফাল যুদ্ধবিমানে উড়বেন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে জারি করা একটি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে রাষ্ট্রপতির এই সফর ভারতীয় বিমানবাহিনীর কার্যপ্রণালী এবং তার ক্ষমতা বোঝার উদ্দেশ্যে। উল্লেখ্য যে, রাফাল ফাইটার জেটগুলি সম্প্রতি 'অপারেশন সিঁদুর'-এ ব্যবহার করা হয়েছিল, যা ২২শে এপ্রিল पहलগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার জবাবে চালানো হয়েছিল।

এর আগেও ফাইটার জেটে উড়েছেন

এটিই প্রথমবার নয় যখন রাষ্ট্রপতি মুর্মু কোনো যুদ্ধবিমানে উড়বেন। এর আগে, ৮ই এপ্রিল ২০২৩ তারিখে তিনি আসামের তেজপুর এয়ারবেস থেকে সুখোই-৩০ MKI ফাইটার জেটে উড়েছিলেন। সেই উড়ানের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় ইতিহাসে তৃতীয় রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন যিনি ফাইটার জেটে উড়েছেন। এর আগে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালাম ২০০৬ সালে এবং প্রতিভা পাতিল ২০০৯ সালে সুখোই-৩০-এ উড়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মুর্মু ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, এবং তাঁর এই পদক্ষেপ কেবল সামরিক বাহিনীর সাথে সংহতিই প্রকাশ করে না, বরং এটিও ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক সংস্থা দেশের সামরিক প্রস্তুতি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ে গর্বিত।

রাফাল: ভারতের আকাশী শক্তি

রাফাল ফাইটার জেট ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশন (Dassault Aviation) কোম্পানি দ্বারা নির্মিত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ভারতীয় বিমানবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম পাঁচটি রাফাল বিমান ২৭শে জুলাই ২০২০ তারিখে ফ্রান্স থেকে ভারতে আনা হয়েছিল এবং সেগুলিকে ১৭তম স্কোয়াড্রন 'গোল্ডেন অ্যারো'-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। রাফালের বিশেষত্ব হল এর ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল ক্ষমতা, হাই-স্পিড অ্যাভিওনিক্স, এবং HAMMER ও SCALP ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা, যা এটিকে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ফাইটার জেটগুলির মধ্যে গণ্য করে। এটি দিন ও রাত উভয় সময়ে যেকোনো আবহাওয়ায় নির্ভুল হামলা চালাতে সক্ষম।

রাফালের শক্তি সম্প্রতি আবারও দেখা গেছে যখন ভারতীয় বিমানবাহিনী এটিকে 'অপারেশন সিঁদুর'-এ ব্যবহার করেছিল। এই সামরিক অভিযানটি ৭ই মে ২০২৫ তারিখে পাকিস্তানের দখলে থাকা এলাকায় সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য শুরু করা হয়েছিল। এর আগে ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের पहलগাম অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলায় অনেক নিরাপত্তা কর্মী শহীদ হয়েছিলেন। 

এর জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী যৌথ অভিযান চালায়। রাফাল বিমানগুলি এই অপারেশনে গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় সুনির্দিষ্ট আঘাত হানে, যার ফলে পাকিস্তানকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। চার দিন ধরে চলা এই অভিযানটি ১০ই মে উভয় দেশের মধ্যে সামরিক স্তরের আলোচনার পর শেষ হয়।

রাষ্ট্রপতির উড়ানের বার্তা

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর এই উড়ান একটি জাতীয় গর্বের মুহূর্ত। এটি এমন ভারতের ছবি তুলে ধরে যা মহিলাদের শক্তিশালী নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখে এবং তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকতা নিয়ে গর্ব করে। তাঁর উড়ান এটিও দেখায় যে ভারত এখন প্রতিরক্ষা আত্মনির্ভরতা এবং প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে।

Leave a comment