পাঞ্জাবে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ১৪০০ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত। ৩.৭৫ লক্ষ একর ফসল ডোবে, স্কুল-কলেজ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকার ত্রাণকার্য জোরদার করেছে। ত্রাণ সামগ্রী ও তহবিল জারি।
Punjab Flood: পাঞ্জাব সরকার রাজ্যকে দুর্যোগ-কবলিত রাজ্য ঘোষণা করেছে। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পাঞ্জাবের ২৩টি জেলার প্রায় ১৪০০ গ্রাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে সরকার ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমস্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে।
দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা
রাজ্য সরকার স্পষ্টভাবে বলেছে যে পাঞ্জাব এই মুহূর্তে দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন। অবিরাম বৃষ্টি ও বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। প্রশাসন মনে করছে যে আগামী দিনগুলিতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।
কৃষি ও পশুপালনের ব্যাপক ক্ষতি
পাঞ্জাবের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কৃষি। কিন্তু এই বন্যায় লক্ষ লক্ষ কৃষকের পরিশ্রম জলে ভেসে গেছে। প্রায় ৩.৭৫ লক্ষ একর কৃষিজমি জলে ডুবে গেছে। বিশেষ করে ধানের ফসল সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া শত শত পশু মারা গেছে, যা কৃষক ও গ্রামীণ পরিবারগুলির উপর দ্বিগুণ আঘাত হেনেছে।
স্কুল ও কলেজ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ
রাজ্য সরকার অবিলম্বে কার্যকর হওয়ার নির্দেশ জারি করে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের মতে, শিশুদের সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই মুহূর্তে পড়াশোনার অনুকূল পরিস্থিতি নেই।
মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদদের সক্রিয়তা
মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বন্যা-কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি সাংরুর ও মাকরোদ সাহেব-এর বন্যা-কবলিত এলাকাগুলিতে গিয়ে ত্রাণকার্যের পর্যালোচনা করবেন। সাংসদ রাঘব চাড্ডা MPLADS তহবিল থেকে ৩.২৫ কোটি টাকা জারি করেছেন। এর মধ্যে ২.৭৫ কোটি গুরদাসপুরে বন্যা সুরক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য এবং ৫০ লক্ষ অমৃতসরের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজের জন্য দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি থেকে আসছে ত্রাণ সামগ্রী
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজriwal জানিয়েছেন যে দিল্লি থেকে প্রতিদিন ত্রাণ সামগ্রীর ট্রাক পাঞ্জাবে পাঠানো হচ্ছে। আপ পার্টির বিধায়ক, সাংসদ এবং সাধারণ মানুষও এই কাজে সাহায্য করছেন। দিল্লির RWA এবং বণিক সংগঠনগুলিও সহযোগিতা করছে।
শতদ্রু নদী ও ভাকরা বাঁধের জলস্তর বৃদ্ধি
ভাকরা বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পর শতদ্রু নদীর জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। মোগা জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকেছে। এখানে সঙ্ঘেড়া, কাম্বো খুর্দ ও সেরేవাল গ্রামের প্রায় ২৫০টি বাড়ি জলে ডুবে গেছে। ভাকরা বাঁধের জলস্তর ১৬৭৮ ফুট পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা বিপদসীমার মাত্র ২ ফুট নিচে। সরকার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
মোগা ও জলন্ধরে অবনতিশীল পরিস্থিতি
মোগার পাশাপাশি জলন্ধরেও অতিবৃষ্টি कहर ডেকে এনেছে। জলন্ধরের বস্তি শেখ এলাকায় একটি বাড়ি ধসে পড়েছে। সৌভাগ্যক্রমে, দুর্ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ ছিল না, অন্যথায় প্রাণহানি হতে পারত।
কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য ও নেতাদের আবেদন
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী शिवराज সিং চৌহান আগামীকাল পাঞ্জাব সফর করবেন। তিনি কৃষক ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করবেন এবং কেন্দ্র থেকে সম্ভাব্য সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেবেন। রাঘব চাড্ডাও বলেছেন যে তিনি এই বিষয়টি সংসদে তুলবেন এবং কেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত সাহায্যের দাবি করবেন।
ত্রাণকার্যে নিয়োজিত দল
ভারতীয় সেনাবাহিনী, NDRF, BSF, পাঞ্জাব পুলিশ এবং বিভিন্ন NGO ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে দিনরাত নিয়োজিত রয়েছে। বন্যা-কবলিত এলাকায় ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে পানীয় জল, ওষুধ এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ও কেজরিওয়ালের সফর
মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ও আপ আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজriwal বন্যা-কবলিত এলাকাগুলি সফর করবেন। তাঁরা ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যের পর্যালোচনা করবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করবেন। আবহাওয়া দপ্তর আগামী কয়েকদিনে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। প্রশাসন জনগণকে সতর্ক থাকার এবং সরকার কর্তৃক জারি করা নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করার আবেদন জানিয়েছে।