স্বাধীনতার ৭৯তম উদ্যাপনের সকালও রক্ষা করতে পারল না পূর্ব বর্ধমানের মানুষদের। ১৫ আগস্টের প্রভাতেই নেমে এল শোকের ছায়া। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের নলা ফেরিঘাট এলাকায় ঘটে গেল ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পর মুহূর্তে রক্তাক্ত হয়ে যায় রাস্তা, হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
দুর্ঘটনার মর্মান্তিক খতিয়ান
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরগামী একটি বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস দ্রুতগতিতে এসে ধাক্কা মারে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভারী ট্রাকের পেছনে। আঘাত এতটাই প্রবল ছিল যে বাসের সামনের অংশ সম্পূর্ণ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বাসের ভেতরে আটকে পড়েন একাধিক যাত্রী, কেউ কেউ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
মৃত্যুর মিছিল ও আহতদের আর্তনাদ
এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১০ জন বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৭ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ধাক্কার শব্দে এলাকার মানুষ ছুটে এসে বাসের ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার কাজ শুরু করেন। কেউ কেউ নিজের জামা কাপড় ছিঁড়ে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
চোখের সামনে মৃত্যুর দৃশ্য
দুর্ঘটনার সময়ে বাসে থাকা বর্ধমানেরই এক যাত্রী কান্নাভেজা গলায় বলেন, “আমরা গান শুনতে শুনতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ একটা প্রবল শব্দ, তারপর চারপাশে শুধু চিৎকার। আমি দেখলাম সামনের সারির মানুষজন আর নড়ছে না।” তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দের যাত্রা পরিণত হয় মৃত্যুমিছিলে।
জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা
পুলিশ ও প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কেটে ফেলতে থাকে বাসের দগ্ধ ও ভাঙা অংশ। ফায়ার ব্রিগেডের সহায়তায় একে একে সকলকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে, অনেকেরই হাত-পা ভেঙে গিয়েছে।
উৎসবের দিনে শোকের কালো মেঘ
স্বাধীনতা দিবসে সাধারণত মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন, পতাকা উত্তোলন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের এই দুর্ঘটনা যেন গোটা জেলায় নেমে আনল অশ্রু আর শোকের স্রোত। শোকবার্তা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও।