অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে চোখের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত চিনি ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়ায়, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে পারে। ঝাপসা দেখা, ফ্লোটার্স এবং রাতে কম দেখা
অতিরিক্ত চিনি আপনার দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করে: আজকাল মিষ্টি খাবারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা চোখের জন্য বিপজ্জনক প্রমাণিত হচ্ছে। স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের প্রাক্তন এইচওডি ডাঃ এ.কে. গ্রোভার এবং ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত চিনি রেটিনার ছোট রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এবং ঝাপসা দৃষ্টির মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মিষ্টি খাওয়া সীমিত করতে এবং নিয়মিত চোখের ও রক্তে শর্করার পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
চোখের উপর মিষ্টির প্রভাব
স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রাক্তন এইচওডি ডাঃ এ.কে. গ্রোভারের মতে, অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে চোখের উপর যে প্রভাব পড়ে, তা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে চোখে ঝাপসা দেখা, ফ্লোটার্স বা কালো দাগ দেখা সাধারণ লক্ষণ হয়ে ওঠে। রাতে জিনিস স্পষ্ট দেখতে না পাওয়া, পড়াশোনা বা মোবাইল স্ক্রিন দেখতে অসুবিধা, বারবার সংক্রমণ বা চোখে ফোলাভাবও এর লক্ষণ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে চোখে চাপ এবং ব্যথাও অনুভূত হতে পারে।
ডাঃ গ্রোভার জানান যে এই লক্ষণগুলি দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির দিকে ইঙ্গিত করে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চোখের ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করানো উচিত। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে গুরুতর ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।
মিষ্টি কীভাবে চোখের রেটিনাকে প্রভাবিত করে
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের গবেষণা অনুসারে, শরীরে শর্করার মাত্রা বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব চোখের রেটিনার উপর পড়ে। রেটিনার ছোট রক্তনালীগুলি অতিরিক্ত চিনির কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে সেগুলিতে ফোলাভাব আসে এবং অনেক সময় রক্ত বা তরল পদার্থ লিক হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
অতিরিক্ত শর্করার কারণে রেটিনা পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। এর ফলে নতুন অস্বাভাবিক রক্তনালী তৈরি হয় যা ভঙ্গুর প্রকৃতির। যদি এই রক্তনালীগুলি ভেঙে যায়, তাহলে চোখে রক্ত জমা হতে পারে। এর ফলস্বরূপ ঝাপসা দৃষ্টি বা এমনকি অন্ধত্বও হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি সেবনের ফলে চোখের লেন্সের উপরও প্রভাব পড়ে এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা মিষ্টি খাওয়া সীমিত করার জন্য কিছু উপায়ের কথা বলেছেন। এর মধ্যে প্রতিদিন চিনির একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা এবং চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করা অন্তর্ভুক্ত। মিষ্টির পরিবর্তে ফল এবং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়া উচিত। নিয়মিতভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করানোও জরুরি।
বছরে অন্তত একবার চোখের পরীক্ষা করানো আবশ্যক। চোখের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য সবুজ শাকসবজি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যদি ঝাপসা দেখা বা ফ্লোটার্সের মতো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।