রাহুল গান্ধির কর্মসূচিতে তৃণমূলের দূত ইউসুফ পাঠান-ললিতেশপতি ত্রিপাঠী

রাহুল গান্ধির কর্মসূচিতে তৃণমূলের দূত ইউসুফ পাঠান-ললিতেশপতি ত্রিপাঠী

রাহুলের যাত্রায় বিহারে নামছে তৃণমূল

আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণকে নতুন মোড় দিতে রাহুল গান্ধির শুরু করা ভোটার অধিকার যাত্রায় এবার যোগ দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিহারের মাটিতে সরাসরি পা রাখতে চলেছেন দলীয় প্রতিনিধি ইউসুফ পাঠান ও ললিতেশপতি ত্রিপাঠী। তাঁদের উপস্থিতি শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বিরোধী জোটে তৃণমূলের অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। রাজনৈতিক মহল বলছে, এটি রাহুলের যাত্রাকে যেমন জোর দেবে, তেমনি বিহারের জমিতে তৃণমূলের উপস্থিতিরও ইঙ্গিত দেবে।

ইউসুফ পাঠান: খেলোয়াড় থেকে রাজনীতির মাঠে

প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান রাজনীতির মাঠে নেমেই আলোচনার কেন্দ্রে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাঁকে মুখপত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তৃণমূল। এবার রাহুলের যাত্রায় তাঁকে পাঠিয়ে দল দেখাল, শুধু বাংলাতেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। খেলার মাঠে তাঁর জনপ্রিয়তা এখন রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনেও কাজে লাগাতে চাইছে ঘাসফুল শিবির।

ললিতেশপতি ত্রিপাঠী: উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহার জুড়ে সংযোগ

তৃণমূলের আরেক দূত ললিতেশপতি ত্রিপাঠী উত্তরপ্রদেশে পরিচিত নাম। কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই দলকে উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে একটি ভিত্তি গড়ে দিতে সাহায্য করেছেন। রাহুলের যাত্রায় তাঁর উপস্থিতি কংগ্রেসের পুরনো শিকড় এবং বর্তমান বিরোধী ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিহারে বিরোধী ঐক্যের পরীক্ষামঞ্চ

বিহারকে বিরোধী রাজনীতির পরীক্ষাগার হিসেবে দেখা হয়। লালু প্রসাদ যাদব থেকে নীতীশ কুমার—সবাই এখান থেকেই জাতীয় সমীকরণে প্রভাব ফেলেছেন। এবার রাহুলের যাত্রায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিরোধী মহাজোটে একতা এবং শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে, এটি বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটাই দেখার বিষয়।

বিজেপির বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের বার্তা

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির জয়যাত্রা থামানোই বিরোধী দলগুলির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রাহুল গান্ধির যাত্রা আসলে সেই লড়াইয়ের অঙ্গ। তৃণমূলও বুঝেছে, বিজেপির বিরুদ্ধে এককভাবে নয়, বরং যৌথভাবে নামলেই সাফল্য মিলতে পারে। পাঠান ও ত্রিপাঠীর বিহার সফর সেই বার্তাকেই জোরালো করছে।

আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে নতুন কৌশল

তৃণমূল সূত্রে খবর, কেবলমাত্র প্রতীকী উপস্থিতি নয়, বরং আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্লোগান, পোস্টার, এবং স্থানীয় স্তরে সভা করার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। ভোটার অধিকার যাত্রায় সাধারণ মানুষকে যুক্ত করাই মূল উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল চাইছে বিহারের মাঠে থেকেই বিরোধী ঐক্যের শক্তি প্রদর্শন করতে।

বিরোধী শিবিরে ঐক্যের বার্তা

একদিকে বিজেপি সরকার বারবার বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে এজেন্সি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ, অন্যদিকে বিরোধী শিবির সেই চাপ কাটিয়ে ঐক্য প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। রাহুলের যাত্রায় তৃণমূলের সক্রিয় অংশগ্রহণ আসলে সেই ঐক্যের ছবি। এটি সাধারণ ভোটারের কাছেও বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যে, ২০২৯-এর দিকে তাকিয়ে বিরোধীরা আর ভাঙা অবস্থায় নেই।

তৃণমূলের জাতীয় রাজনীতিতে কৌশল

বাংলার বাইরে তৃণমূলের অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নের মুখে। তবে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো রাজ্যে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পারলে ২০২৯-এ তা কার্যকর হতে পারে। রাহুলের যাত্রায় যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল বোঝাল, তারা শুধু আঞ্চলিক নয়, জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।

সামনে কী অপেক্ষা করছে?

রাহুল গান্ধির এই কর্মসূচি কতটা সাফল্য পাবে, সেটি সময় বলবে। তবে ইউসুফ পাঠান ও ললিতেশপতি ত্রিপাঠীর উপস্থিতি নিঃসন্দেহে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করেছে। বিরোধী ঐক্যের ছবিকে আরও জোরালো করতে এই পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

Leave a comment