রাশিয়া-সম্পর্কিত পদক্ষেপের প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ভারতের ওপর আরোপিত মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞার (secondary sanctions) উল্লেখ করে ওই সাংবাদিককে নতুন চাকরি খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
আমেরিকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর স্পষ্টবাদী মন্তব্য এবং প্রেস কনফারেন্সে রাগত প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রায়শই শিরোনামে থাকেন। সম্প্রতি পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডার সঙ্গে বৈঠকের সময় তাঁর এই ধরনের একটি মন্তব্য সামনে আসে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ার প্রশ্নে ট্রাম্প এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যে তিনি ওই সাংবাদিককে নতুন চাকরি খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এই সময় তিনি ভারতের ওপর আরোপিত মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞা (Secondary Sanctions) এবং শুল্কের (tariff) কথাও উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন যে এর ফলে রাশিয়ার "শত শত কোটি ডলার" ক্ষতি হয়েছে।
ট্রাম্পকে বিদ্ধ করার মতো প্রশ্ন
বৈঠকের সময় একজন পোলিশ সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কেন আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই প্রশ্নটি ট্রাম্পকে এতটাই বিদ্ধ করে যে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা জবাব দেন। রাগান্বিত ট্রাম্প বলেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ এবং তাঁর প্রশাসন এর ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্প ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেন – "আপনি কীভাবে জানলেন যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? ভারতের মতো বড় ক্রেতার ওপর মাধ্যমিক শুল্ক আরোপ করা কি কোনো পদক্ষেপ নয়?"
ভারতের ওপর ৫০% শুল্কের দাবি
ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে ভারতের ওপর ২৫% পারস্পরিক শুল্ক (Reciprocal Tariff) ইতিমধ্যেই কার্যকর রয়েছে। এর সঙ্গে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার কারণে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এভাবে ভারতের ওপর মোট ৫০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন যে এই শুল্ক ২৭শে আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে এবং এর সরাসরি প্রভাব রাশিয়ার ওপর পড়েছে। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়া ইতিমধ্যেই "শত শত কোটি ডলার" ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
'পর্যায় দুই এবং পর্যায় তিন এখনও বাকি'
ট্রাম্প তাঁর মন্তব্যে আরও স্পষ্ট করে দেন যে রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরির প্রক্রিয়া এখানেই শেষ হবে না। তিনি বলেন – "আমি এখনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায় সম্পন্ন করিনি।"
ধারণা করা হচ্ছে যে আমেরিকা ভবিষ্যতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। "পর্যায় দুই" এবং "পর্যায় তিন" রাশিয়ার বিরুদ্ধে কীভাবে কার্যকর হবে, তা ট্রাম্প প্রকাশ করেননি, তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে ওয়াশিংটন পিছু হটবে না।
সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ এবং 'নতুন চাকরি' সংক্রান্ত মন্তব্য
ট্রাম্পের রাগ কেবল নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নকে "অর্থহীন" বলে অভিহিত করেন এবং বলেন – "যখন আপনি বলেন যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তখন আমার মনে হয় আপনার একটি নতুন চাকরি খুঁজে নেওয়া উচিত।"
এই মন্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ট্রাম্পের সমালোচকরা এটিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে তাঁর সমর্থকরা এটিকে "এক শক্তিশালী নেতার জবাব" বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ভারত কেন এই বিতর্কের কেন্দ্রে
ভারত দীর্ঘকাল ধরে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে আসছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত তাদের জ্বালানি চাহিদা মাথায় রেখে রাশিয়া থেকে কেনা অব্যাহত রেখেছে। এতে আমেরিকা চিন্তিত যে রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে না।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, যদি ভারত ও চীনের মতো বড় আমদানিকারকরা রাশিয়া থেকে কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে মস্কোর ওপর সরাসরি চাপ পড়বে। কিন্তু ভারত তাদের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তেল আমদানি অব্যাহত রাখে।
মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞার (Secondary Sanctions) অর্থ হল, যদি কোনো তৃতীয় দেশ রাশিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ থেকে ব্যবসা করে, তাহলে তাদের ওপরও মার্কিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে। ভারতের ওপর আরোপিত মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব হলো যে কিছু মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করতে এড়িয়ে চলছে। এছাড়াও, মার্কিন বাজারে ভারতীয় রপ্তানির ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।
রাশিয়ার ওপর কতটা প্রভাব
ট্রাম্পের দাবি, তাঁর নীতির ফলে রাশিয়া ইতিমধ্যেই "শত শত কোটি ডলার" ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে রাশিয়া এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত ও চীনের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ ছাড়ে বিক্রি করে রাশিয়া কেবল তাদের পুরনো গ্রাহকদেরই ধরে রাখেনি, বরং নতুন বাজারও খুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার ওপর কতটা প্রকৃত প্রভাব পড়েছে তা বলা কঠিন।