ছত্তিশগড়ের রায়গড়ে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে এক হাতির বাচ্চার ডুবে মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর পালের অন্যান্য হাতিরা দেহটিকে বাইরে টেনে আনে, আর বন দপ্তর তদন্ত ও শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
রায়গড়: ছত্তিশগড়ের রায়গড় জেলায় এক আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেল, যখন স্নান করার সময় ডুবে যাওয়া একটি হাতির বাচ্চাকে তার পাল নিজেই বাইরে টেনে আনল। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জগুলিকেই তুলে ধরে না, বরং প্রাণীদের সংবেদনশীলতা এবং সামাজিক সংহতির এক ঝলকও দেখায়।
পুকুরে ডুবে হাতির বাচ্চার মৃত্যু
ধরমজয়গড় বনমণ্ডলের ছাল রেঞ্জে মঙ্গলবার সকালে প্রায় ২২টি হাতির একটি পাল ঔরানারার একটি পুকুরে জল পান করতে ও স্নান করতে গিয়েছিল। এই সময় এক বছরের কম বয়সী একটি মা হাতি শাবক পুকুরের গভীর জলে চলে যায় এবং ডুবে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর কিছুক্ষণ পুরো পাল সেখানেই দাঁড়িয়েছিল, যেন কোনো সঙ্গীর বিদায়ে নীরব শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট। এই স্থানটি সাধারণত হাতিদের স্নান করার জন্য নিরাপদ জায়গা বলে মনে করা হত, কিন্তু সম্প্রতি জলের স্তর বেড়ে যাওয়ায় এটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
সঙ্গীর মৃত্যুতে শোকাহত পাল

দুর্ঘটনার পরপরই হাতির পাল যেন মানুষের মতো আচরণ করে। সমস্ত হাতি পুকুরের চারপাশে জড়ো হয় এবং একসঙ্গে শাবকটির দেহ জল থেকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত মর্মস্পর্শী — যেন পাল তার সঙ্গীকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে হাতি অত্যন্ত সামাজিক এবং সংবেদনশীল প্রাণী। তারা তাদের দলের কোনো সদস্যের মৃত্যুতে প্রায়শই এমন সংবেদনশীলতা দেখায়, যা পশু জগতে বিরল বলে বিবেচিত হয়।
বন বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ
ঘটনার খবর পেয়ে বন বিভাগের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং এলাকাটি সুরক্ষিত করে। বুধবার সকালে তিন সদস্যের পশু চিকিৎসক দল শাবকটির ময়নাতদন্ত করে, যেখানে নিশ্চিত করা হয় যে তার মৃত্যু জলে ডুবেই হয়েছে।
ময়নাতদন্তের পর মৃত শাবকটির শেষকৃত্য জঙ্গলেই সম্পন্ন করা হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে হাতির পালের কাছে কোনো আঘাত বা সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকার আবেদন
বন বিভাগীয় কর্মকর্তা জিতেন্দ্র উপাধ্যায় জানিয়েছেন যে বর্তমানে ধরমজয়গড় এলাকায় প্রায় ৫০টি হাতি ঘোরাফেরা করছে। বিভাগ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে ঘোষণা করে মানুষকে সতর্ক থাকার আবেদন জানিয়েছে। গ্রামবাসীদের রাতে খেতে না থাকতে এবং হাতি থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটি আবারও ভাবতে বাধ্য করেছে যে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ উভয়ের জন্যই কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রায়গড়ের এই দুঃখজনক কিন্তু আবেগপূর্ণ গল্পটি প্রকৃতির সংবেদনশীলতার এক অমূল্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।












