রাজস্থানে মন্দিরে প্রবেশে বাধা, দুর্গের ছাদে মহারাজের অনশন!

রাজস্থানে মন্দিরে প্রবেশে বাধা, দুর্গের ছাদে মহারাজের অনশন!

রাজস্থানের জালোর জেলায় রবিবার সেই সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন কথাবাচক অভয় দাস মহারাজকে ঐতিহাসিক বায়োসা মাতা মন্দিরে দর্শন করতে বাধা দেওয়া হয়। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কায় প্রশাসন এই পদক্ষেপ নেয়, কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহারাজ শুধু বিরোধিতাই জানাননি, দুর্গের ছাদে উঠে আমরণ অনশনের ঘোষণা করেন। এই সময় তাঁর সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতিও তৈরি হয়।

কীভাবে বিতর্কের শুরু

পালি জেলার তখতগড়ে অবস্থিত ভারত মাতা মন্দির থেকে শ্রাবণ মাসীয় সমরসতা চাতুর্মাস মহোৎসবের অধীনে জালোরে পৌঁছানো অভয় দাস মহারাজ আট দিনব্যাপী ভাগবত কথা করছিলেন। এই কথার সময় তিনি कथितভাবে বায়োসা মাতা মন্দিরের পাশে তৈরি একটি মাজার নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যার পরে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক হয়ে যায়।

শনিবার যখন মহারাজ তাঁর সমর্থকদের নিয়ে মন্দিরের দিকে রওনা হন, তখন পুলিশ তাঁকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এর ওপর মঞ্চ থেকে তিনি প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানান যে তিনি অবশ্যই মাতার দর্শন করবেন, পারলে কেউ যেন তাঁকে আটকায়। এরপরের দিন অর্থাৎ রবিবার তিনি বজরং দল ও শত শত সমর্থকদের নিয়ে মন্দিরের দিকে যাত্রা করেন।

পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে কলোনিতে পৌঁছান

অভয় দাসের কনভয় যেই মন্দিরের ঘাটির দিকে পৌঁছায়, পুলিশ রাস্তা আটকে দেয়। যদিও মহারাজ পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে শহরের ভীণমাল রোড বাইপাস হয়ে কালকা কলোনিতে প্রবেশ করেন এবং একটি বাড়ির ছাদে উঠে যান।

সেখান থেকেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ হয়ে প্রশাসন ও সরকারের ওপর গুরুতর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা ও মন্ত্রী যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে হেঁটে মাতার দর্শন করবেন, ততক্ষণ তিনি অন্ন-জল ত্যাগ করে এখানেই অনশন করবেন।

তিনি আরও বলেন যে মুখ্য সচেতক যোগেশ্বর গর্গ যদি জালোরে থাকতেন, তাহলে প্রশাসন তাঁকে কখনও আটকাতো না। শুধু তাই নয়, তিনি এও অভিযোগ করেন যে পুলিশ তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়েছে এবং সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে।

ভিড়ের পাথরবৃষ্টিতে পুলিশকর্মী আহত

ঘটনাটি সেই সময় আরও বড় আকার নেয় যখন বিপুল সংখ্যক ভিড় বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং পুলিশের ওপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। এই হামলায় অতিরিক্ত এসপি সহ অনেক পুলিশকর্মী আহত হন। তাঁদের তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে, সমর্থকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে রাস্তা অবরোধ করে এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।

পরিস্থিতি খারাপ হতে দেখে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী তলব করা হয় এবং এলাকাটিকে দুর্গে রূপান্তরিত করা হয়।

এসপি-র বক্তব্য

ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ সুপার জ্ঞানচাঁদ যাদব স্পষ্ট করে জানান যে মহারাজকে মাতার দর্শন থেকে নয়, বরং বিপুল ভিড় নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান যে মহারাজ আগেই কথাবাচনের সময় অবৈধ দখল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, যার ফলে পরিবেশ সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিল। এই কারণে প্রশাসন তাঁকে সীমিত সংখ্যক লোক নিয়ে এবং লাইন দিয়ে দর্শন করার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু মহারাজ অনুমতি ছাড়াই মিছিল করে বিপুল সংখ্যক লোক নিয়ে মন্দিরে যাওয়ার ঘোষণা করেছিলেন।

এসপি আরও বলেন যে মন্দিরে যাওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট রাস্তা নেওয়া হয়নি এবং এর জন্য কোনও পূর্ব অনুমতিও নেওয়া হয়নি।

ভাইরাল ভিডিও এবং গ্রেফতার

অভয় দাস মহারাজের কথিত বিতর্কিত বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়, যার পরে বিশেষ সম্প্রদায়ের কিছু যুবক আপত্তিকর মন্তব্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে।

এই ঘটনাগুলির দিকে তাকিয়ে প্রশাসন মন্দিরের রাস্তায় ভিড়ের প্রবেশ বন্ধ করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে শহরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায় এবং শান্তি বজায় থাকে।

পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর

আপাতত পুলিশ ও প্রশাসনের সতর্কতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং ড্রোনের মাধ্যমেও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

প্রশাসন পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে এবং সমস্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সাথে, অভয় দাস মহারাজের অনশন নিয়ে জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a comment