দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকাগুলির বিশেষ নিবিড় সংশোধনের ঘোষণার সাথে সাথেই সোমবার মধ্যরাত থেকে এই সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভোটার তালিকাগুলি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে।
দেশব্যাপী SIR: ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকাগুলির বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (Special Intensive Revision – SIR 2.0) দ্বিতীয় ধাপের ঘোষণা করেছে। কমিশনের মতে, এই প্রক্রিয়া ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্পন্ন করা হবে এবং সেই দিন নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, সোমবার মধ্যরাত থেকে এই সমস্ত রাজ্যের ভোটার তালিকাগুলি "ফ্রিজ" করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এখন থেকে কোনো সংশোধন, বিলোপ বা সংযোজন-বিয়োজনের অনুমতি শুধুমাত্র সংশোধন প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুযায়ীই হবে।
কী এই SIR 2.0 এবং কেন এটি জরুরি?
SIR 2.0 এর উদ্দেশ্য হল দেশব্যাপী ভোটার তালিকাগুলিকে হালনাগাদ, স্বচ্ছ এবং ত্রুটিমুক্ত করা। এই প্রক্রিয়ার অধীনে, প্রতিটি রাজ্যে পূর্ববর্তী নিবিড় সংশোধন (২০০২-২০০৪ সালের মধ্যে) কে ভিত্তি ধরে ভোটারদের নামের মিলকরণ করা হবে। পুরনো রেকর্ডের সাথে তুলনা করে এটি নিশ্চিত করা হবে যে কোনো ব্যক্তির নাম ভুলভাবে পুনরাবৃত্তি বা বাদ দেওয়া হয়নি।
ECI জানিয়েছে যে ভোটার তালিকা নির্বাচনী স্বচ্ছতার মেরুদণ্ড। যদি তালিকা সঠিক না হয়, তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রভাবিত হয়। তাই এইবার কমিশন প্রতিটি স্তরে যাচাইকরণ আরও শক্তিশালী করেছে।
ফ্রিজ করা তালিকা এবং BLO এর ভূমিকা
ফ্রিজ করার পর, এখন এই রাজ্যগুলির সমস্ত ভোটারদের বুথ-স্তরের আধিকারিক (BLO) বিশেষ "গণনা ফরম" (Enumeration Form) প্রদান করবেন। এই ফরমগুলিতে ভোটারের নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিবরণ আগে থেকেই পূরণ করা থাকবে। ভোটারকে যাচাই করতে হবে যে তাদের নাম বা তাদের বাবা-মায়ের নাম পুরনো SIR (২০০২-২০০৪ সালের তালিকা) এ ছিল কিনা।

যদি নাম আগে থেকেই বিদ্যমান থাকে, তবে অতিরিক্ত নথির প্রয়োজন নেই। যদি নাম নতুন হয়, তবে পরিচয় এবং যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য ১২টি নির্ধারিত নথির মধ্যে যেকোনো একটি দিতে হবে। BLO প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে সর্বোচ্চ তিনবার পরিদর্শন করবে। যদি কোনো ব্যক্তি উপলব্ধ না হয়, তবে BLO পুনরায় গিয়ে যাচাই করবে। এছাড়াও, BLO এটিও যাচাই করবে যে ভোটারের নাম অন্য কোনো নির্বাচনী এলাকার তালিকায় নেই তো?
আধার কার্ডের বিষয়ে স্পষ্টতা
কমিশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে আধার কার্ডকে ১২টি অনুমোদিত নথির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার স্পষ্ট করে বলেছেন যে আধার শুধুমাত্র একটি পরিচয়পত্র, এটি বাসস্থান, নাগরিকত্ব বা জন্মতারিখের প্রমাণ নয়। আধার আইনের ধারা ৯ এর অধীনে আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা হয় না। সুপ্রিম কোর্টও বারবার পুনরাবৃত্তি করেছে যে এটি শুধুমাত্র পরিচয়ের একটি মাধ্যম এবং এর ব্যবহার ই-স্বাক্ষর ও প্রমাণীকরণের জন্য করা যেতে পারে।
সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করেন যে বিজেপি-শাসিত অসমে এই প্রক্রিয়া কেন কার্যকর করা হয়নি, তখন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন যে রাজ্যে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের সাথে সম্পর্কিত একটি পৃথক আইনি প্রক্রিয়া চলছে যা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে রয়েছে। তাই অসমে SIR 2.0 এর জন্য একটি ভিন্ন তারিখ এবং আদেশ পরে জারি করা হবে।
কারা নিবন্ধন করতে পারবে
ভোটাররা চাইলে অনলাইন ফর্মও পূরণ করতে পারেন। যদি কারও নাম বা তাদের বাবা-মায়ের নাম ২০০৩ সালের তালিকায় না থাকে, তবে নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিক (ERO) ১২টি নথির ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করবেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও যে কোনো ভোটার বা বাসিন্দা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপিল করতে পারেন। অসন্তোষ থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (CEO) এর কাছে দ্বিতীয় আপিল দায়ের করা যেতে পারে।
- সংবিধানের ৩২৬ ধারা অনুসারে,
- প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিক,
- যাঁর বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি,
- যিনি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা,
- এবং যিনি কোনো আইনি কারণে অযোগ্য ঘোষিত নন,
তিনি ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার যোগ্য। কমিশন এও নির্দেশ দিয়েছে যে কোনো ভোটকেন্দ্রে ১,২০০ এর বেশি ভোটার যেন না থাকেন। ভিড় এড়াতে উঁচু ভবন, গেটেড কলোনি এবং বস্তি এলাকায় নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।













