রাজস্থানে ‘পণ্ডিত’ বিতর্ক: গেহলটের মন্তব্যে রাজনৈতিক তরজা

রাজস্থানে ‘পণ্ডিত’ বিতর্ক: গেহলটের মন্তব্যে রাজনৈতিক তরজা

সম্প্রতি রাজস্থানের রাজনীতিতে ‘পণ্ডিত’ শব্দটিকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মাকে বারবার ‘পণ্ডিত’ বলে সম্বোধন করেন। গেহলটের এই মন্তব্যের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং বিজেপি এটিকে জাতিগত রাজনীতির অভিযোগ করে পাল্টা জবাব দেয়।

গেহলটের এই মন্তব্যটি আসে জয়পুরে অবস্থিত কংগ্রেস সদর দফতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিজা ব্যাসের একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের সময়। তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মাকে কটাক্ষ করে বলেন, পণ্ডিত ভজনলাল শর্মা কেবল রাজ্যের সফর করছেন, যেখানে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। গেহলট তাঁর পুরো আলোচনায় বেশ কয়েকবার ‘পণ্ডিত’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যার ফলে বিতর্ক আরও বাড়ে।

পণ্ডিত শব্দ নিয়ে গেহলটের কটাক্ষ

গেহলটের মন্তব্যের পর বিজেপি ময়দানে নামে। প্রদেশ সভাপতি এবং রাজ্যসভার সাংসদ মদন রাঠোর পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, 'পণ্ডিত' কোনো জাতি নয়, বরং এটি কর্মের দ্বারা নির্ধারিত হয়। তিনি আরও বলেন, অশোক গেহলট মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মাকে বিদ্বান মনে করেন, তাই তিনি তাঁকে 'পণ্ডিত' বলছেন, কিন্তু কংগ্রেস এটিকে ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।

রাঠোর আরও বলেন, কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে জাতিগত অনুভূতি উস্কে দিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। তিনি অভিযোগ করেন যে গেহলটের এই ধরনের মন্তব্য রাজ্যে জাতিগত বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা, যার মাধ্যমে কংগ্রেস রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চায়।

চুরির ঘটনা নিয়েও রাজনৈতিক তরজা

গেহলট এবং রাঠোরের মধ্যে শুধু 'পণ্ডিত' শব্দ নিয়েই নয়, আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও বাদানুবাদ চলছে। অশোক গেহলট দৌসা জেলার কংগ্রেস বিধায়ক দীনদয়াল বৈরওয়ার সঙ্গে এক মাসের মধ্যে তিনটি চুরির ঘটনার উল্লেখ করে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, যখন একজন বিধায়কই সুরক্ষিত নন, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কল্পনা করা কঠিন। তিনি তীব্র ভাষায় বলেন, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।

এর প্রতিক্রিয়ায় মদন রাঠোর বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা আগের চেয়ে অনেক ভালো। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক অপরাধমূলক ঘটনাগুলিতে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাঠোর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করে বলেন যে বিরোধী দল সস্তা রাজনীতি করছে।

পণ্ডিত বিতর্ক রাজনৈতিক রূপ নিল

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গেহলটের এই মন্তব্য কেবল কটাক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গেহলটের মন্তব্যের ভাইরাল হওয়ার পর, কিছু অংশের মানুষ এটিকে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবেও দেখেছে, যেখানে কংগ্রেসের দাবি, মন্তব্যে কোনো জাতিগত অনুভূতি ছিল না।

বিজেপি গেহলটের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বলে যে কংগ্রেস এখন ইস্যুর পরিবর্তে জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতারা বলছেন, গেহলট কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই মন্তব্য করেছিলেন, যাকে বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে বড় করে দেখাচ্ছে।

নির্বাচনের মরসুমে বেড়েছে বাগযুদ্ধ

রাজস্থানের রাজনীতিতে নির্বাচনের উত্তাপ যত বাড়ছে, ততই নেতাদের বাগযুদ্ধও তীব্র হচ্ছে। ‘পণ্ডিত’ শব্দ নিয়ে শুরু হওয়া এই বিতর্ক এখন আইন-শৃঙ্খলা এবং জাতিগত রাজনীতির মোড় নিয়েছে। অশোক গেহলট যেখানে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন, সেখানে বিজেপি তাঁর প্রতিটি অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে এই বিতর্ক ঠান্ডা হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই, এবং আগামী দিনগুলিতে এর সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক কার্যকলাপ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a comment