রাজ্যসভায় CISF জওয়ানদের মোতায়েন করা নিয়ে বিরোধী ও সরকার মুখোমুখি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রিজিজু সংসদের মর্যাদা ভঙ্গ এবং মিথ্যা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীদের বিরুদ্ধে।
Kiren Rijiju: সোমবার ও মঙ্গলবার রাজ্যসভায় যা ঘটেছে, তা সংসদের মর্যাদা ও শৃঙ্খলার উপর বড় প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী ও সরকারের মধ্যে তীব্র বিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এবং সংসদের কার্যক্রমে বারবার ব্যাঘাত ঘটানো নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় কার্য মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে শুধু সংসদকে বিভ্রান্ত করার নয়, দেশের জনসাধারণকেও বিভ্রান্ত করার অভিযোগ করেছেন।
সদনের ভেতরে কী হয়েছিল?
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় তুমুল হট্টগোল হয় যখন বিরোধী দলগুলি সদনের ওয়েলে সিআইএসএফ (CISF) জওয়ান মোতায়েন করার বিষয়ে আপত্তি জানায়। এর তীব্র বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। সংসদ ভবনের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, সদনের ভেতরে কোনও বহিরাগত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। শুধুমাত্র সংসদের নিয়ম অনুযায়ী মার্শালরা উপস্থিত ছিলেন।
রিজিজু বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সংসদের ভেতরে শুধুমাত্র সদস্য, কর্মচারী ও মার্শালদের প্রবেশের অনুমতি আছে। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তারা মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে সদনের মর্যাদাহানি করছেন।
মল্লিকার্জুন খাড়গের চিঠি নিয়ে বিতর্ক
রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে উপরাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যা নিয়ে হট্টগোলের সূত্রপাত। রিজিজু আলোচনার সময় এই চিঠির ওপর আপত্তি জানিয়ে বলেন যে, বিরোধীরা এই চিঠির মাধ্যমে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে একটি ইস্যু তৈরি করছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র নিয়মের বিরুদ্ধেই নয়, সংসদের মর্যাদাকেও ক্ষুন্ন করে।
জেপি নাড্ডা ও খাড়গের মধ্যে তীব্র বিতর্ক
রাজ্যসভায় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নেতা জেপি নাড্ডা এবং কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের মধ্যেও তীব্র বিতর্ক হয়। খাড়গে অভিযোগ করেন যে, বিজেপি সরকার রাজ্যসভার ওয়েলে সিআইএসএফ জওয়ানদের মোতায়েন করেছে। তিনি বলেন, যখন সদস্যরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তখন নিরাপত্তা কর্মীদের উপস্থিতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
খাড়গে বলেন, "আমরা হতবাক ও স্তম্ভিত যে কিভাবে সিআইএসএফ কর্মীদের সদনের ওয়েলে পাঠানো হয়েছে। আমরা এই দৃশ্য গতকালও দেখেছি এবং আজ আবার পুনরাবৃত্তি হল। এটা अस्वीकार्य। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি এবং আশা করি ভবিষ্যতে এমনটা হবে না।"
সরকারের সাফাই: কোনো বহিরাগত বাহিনী নয়
সরকারের পক্ষ থেকে কিরেণ রিজিজু বলেন যে, বিরোধীদের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, সংসদের ভেতরে কোনো সিআইএসএফ জওয়ান মোতায়েন ছিল না। সদনের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য শুধুমাত্র মার্শালদের নিয়োগ করা হয়েছিল, যা সম্পূর্ণভাবে নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদের কাজকর্মে বাধা দিচ্ছেন যাতে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো নিয়ে আলোচনা না হতে পারে।
সংসদে বিধিবদ্ধ কাজকর্মে বাধা
রিজিজু আরও বলেন যে, সংসদের অধিবেশনের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানো যায়নি। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে, রাজ্যসভায় শুধুমাত্র শিপিং বিল পাশ হয়েছে, যেখানে লোকসভায় মণিপুর নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন সংক্রান্ত বিধিবদ্ধ প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এই প্রস্তাব রাজ্যসভাতেও পাশ হওয়ার কথা। তিনি বিরোধীদের কাছে আবেদন করেন যে, তারা যেন সংসদের কাজকর্মে বাধা না দেন এবং জনগণের স্বার্থে সহযোগিতা করেন।
জনগণের প্রত্যাশার সম্মান করুন: রিজিজু
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন যে, দেশের জনগণ সকল সাংসদকে সংসদে এজন্যই পাঠিয়েছেন যাতে তারা তাদের জন্য কাজ করেন। যদি সংসদে শুধুমাত্র বিরোধ ও হট্টগোলই হয়, তাহলে নীতিগত সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নমূলক কাজকর্মে প্রভাব পড়বে। তিনি প্রধান বিরোধী দলগুলোর কাছে আবেদন করেন যে, তারা যেন সংসদের মর্যাদা বজায় রাখেন এবং বিধিবদ্ধ কাজকর্মে বাধা না দেন।