টেকনোলজির দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি Apple Inc.-এর প্রধান পরিচালন আধিকারিক (Chief Operating Officer - COO) পদে মুরাদাবাদের বাসিন্দা সাবিহ খান-কে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর শহর মুরাদাবাদে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়েছে। শহরবাসী থেকে আত্মীয়-স্বজন, সকলেই এই সাফল্যে গর্বিত বোধ করছেন।
সাবিহ খানের এই সাফল্য শুধু তাঁর পরিবার বা মুরাদাবাদের জন্য নয়, বরং সমগ্র উত্তরপ্রদেশ এবং ভারতের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তিনি এখন সেই সব ভারতীয়দের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, যাঁরা বিশ্বস্তরে কোনো বহুজাতিক কোম্পানিতে এত উঁচু পদ অর্জন করেছেন।
নম্রতা ও সাফল্যের মিলন
সাবিহ খান এখন সেই সম্মানজনক তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন, যেখানে আগে থেকেই গুগল-এর সুন্দর পিচাই, মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা এবং পেপসিকোর প্রাক্তন সিইও ইন্দ্রা নুয়ীর মতো ভারতীয় दिग्গজদের নাম রয়েছে।
সাবিহ খানের জন্ম ১৯৬৬ সালে, মুরাদাবাদের সিভিল লাইন্স এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক মোহাম্মদ ইয়ার খান কোঠিতে। প্রায় ৬৫ হাজার বর্গফুটের এই কোঠিটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। বর্তমানে এই কোঠিতে একটি মিনি মল, শপিং কমপ্লেক্স এবং একটি স্কুল চলছে। এর একটি অংশে আজও খান পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে তাঁর চাচাতো ভাই ও আত্মীয়-স্বজনরা বসবাস করেন।
তাঁর এই নিয়োগের পর, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠেছে। মানুষ তাঁকে 'মুরাদাবাদের গৌরব' বলছেন এবং তাঁর নম্রতার উদাহরণ দিচ্ছেন।
পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের আনন্দ প্রকাশ
সাবিহ-এর সাফল্যে তাঁর মামাতো ভাই এবং শহরের হোটেল ব্যবসায়ী আমান ইয়ার খান অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি সংবাদ সংস্থা 'পিটিআই-ভাষা'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন,
এটা শুধু মুরাদাবাদ বা উত্তরপ্রদেশের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা অত্যন্ত খুশি যে আমাদের আপন ভাই এখন বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানিতে এত বড় পদে পৌঁছেছেন।
আমান ইয়ার খান জানান যে সাবিহ তাঁর ফুফা সঈদ খানের ছেলে, যিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি আরও জানান, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে সাবিহ মুরাদাবাদের সেন্ট মেরি স্কুল-এ পড়াশোনা করেছেন।
সাবিহ খানের নম্রতার প্রশংসা করে আমান বলেন,
তিনি বয়সে আমার থেকে বড় এবং সব কাজে পরিচ্ছন্ন। যদি কেউ তাঁকে না চিনে তাঁর সঙ্গে কয়েক দিন কাটায়, তাহলে বুঝতেই পারবে না যে তিনি অ্যাপল-এ এত উঁচু পদে আছেন। তাঁর ব্যবহার খুবই সরল এবং মাটির কাছাকাছি।
শীঘ্রই নতুন দায়িত্ব গ্রহণ
পরিবারের সূত্রে খবর, সাবিহ খান এই মাসের শেষ নাগাদ তাঁর নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে বসবাস করছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানান যে তিনি ভারতীয় খাদ্য, বিশেষ করে কারি ও বিরিয়ানি ভালোবাসেন।
মুরাদাবাদেরই অপর বাসিন্দা মাহফুজ খানও তাঁর আনন্দ প্রকাশ করে বলেন,
আমি সাবিহ খানের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তিনি তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে মুরাদাবাদের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এখন তো শুধু মুরাদাবাদ নয়, সারা দেশ তাঁর সম্পর্কে জানতে পারছে।
ভারতের জন্য আরও একটি গর্বের মুহূর্ত
সাবিহ খানের এই নিয়োগ ভারতের জন্যেও একটি বিশেষ কৃতিত্ব। এটি সেই প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক যা ভারতীয় বংশোদ্ভূত পেশাদাররা আজ বিশ্বজুড়ে দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা ক্রমাগত বড় দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যাপলের মতো একটি বিশ্বখ্যাত কোম্পানিতে সিওও-এর পদ কেবল প্রযুক্তিগত যোগ্যতা নয়, নেতৃত্ব, কৌশল এবং আন্তর্জাতিক বোধেরও দাবি রাখে। সাবিহ খান প্রমাণ করেছেন যে একটি ছোট শহর থেকে উঠে এসেও একজন ব্যক্তি বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছতে পারে।