এলন মাস্কের Starlink-কে ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যার ফলে নেটওয়ার্ক ছাড়াই কলিং এবং হাই-স্পিড ইন্টারনেটের সুবিধা দূর-দূরান্তের অঞ্চলগুলিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
Starlink: ভারতে ডিজিটাল সংযোগকে এক নতুন উচ্চতা দেওয়ার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে, এলন মাস্কের সংস্থা Starlink অবশেষে ভারতে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড সার্ভিস শুরু করার জন্য বহুল প্রতীক্ষিত লাইসেন্সটি পেয়েছে। ভারতীয় স্পেস কমিউনিকেশন রেগুলেটর IN-SPACe Starlink-কে পাঁচ বছরের জন্য এই লাইসেন্স প্রদান করেছে। এবার খুব শীঘ্রই দেশের দূর-দূরান্ত এবং দুর্গম এলাকাগুলিতেও হাই-স্পিড ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্ক ছাড়াই কলিং সম্ভব হবে।
Starlink-এর আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স প্রাপ্তি
SpaceX-এর সহযোগী সংস্থা Starlink ভারতে দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এবার IN-SPACe-এর থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পর, সংস্থাটি ভারতে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করার অনুমতি পেয়েছে। Starlink, তাদের LEO (Low Earth Orbit) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভারতের সেই সমস্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করবে, যেখানে প্রচলিত টেলিকম সংস্থাগুলি পৌঁছতে অসমর্থ হয়েছে। এই লাইসেন্স ৫ বছরের জন্য দেওয়া হয়েছে এবং এটি কোম্পানিকে Gen 1 স্যাটেলাইট ক্যাপাসিটির সঙ্গে পরিষেবা প্রদানের অনুমতি দেয়।
ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের দিকে আরও এক ধাপ
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই দেশকে ডিজিটালভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সারিতে Starlink-এর প্রবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে যেমন Jio, Airtel এবং Ananth Technologies-এর মতো দেশের প্রধান সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের দিকে কাজ করছে, তেমনই Starlink-এর প্রবেশে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং পরিষেবার গুণগত মানও উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রামীণ এবং সীমান্ত অঞ্চলগুলি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে
Starlink-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এর পরিষেবাগুলি কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের উপর নির্ভরশীল নয়। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি ইন্টারনেট সংকেত জমিতে উপলব্ধ করানো হয়। এর সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে গ্রামীণ, পার্বত্য, আদিবাসী এবং সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে, যেখানে এখনও মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট পরিষেবা খুবই দুর্বল অথবা নেই বললেই চলে। এবার সেই এলাকাগুলিতেও ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন পড়াশোনা করতে পারবে, কৃষকরা স্মার্ট এগ্রিকালচার প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, এবং জরুরি পরিস্থিতিতে নেটওয়ার্ক ছাড়াই কলিং সম্ভব হবে।
খরচ কত হতে পারে?
রিপোর্ট অনুযায়ী, Starlink-এর পরিষেবার মাসিক খরচ প্রায় ₹3,300 হতে পারে। যদিও এই খরচ কিছুটা বেশি মনে হতে পারে, তবে পরিষেবার গুণমান এবং দূরবর্তী এলাকাগুলিতে এর উপলব্ধতা বিবেচনা করে, এটিকে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন হিসাবে দেখা যেতে পারে। Starlink-এর পরিকল্পনা হল ধীরে ধীরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেস স্টেশন স্থাপন করা, যাতে পরিষেবার স্থিতিশীলতা এবং বিস্তার উভয়ই নিশ্চিত করা যায়।
এখনও স্পেকট্রাম অ্যালোকেশন-এর অপেক্ষা
যদিও Starlink লাইসেন্স পেয়েছে, তবে এখনো তাদের স্পেকট্রাম অ্যালোকেশন-এর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। স্পেকট্রাম পাওয়ার পরেই সংস্থাটি তাদের বেস স্টেশন সক্রিয় করবে এবং তারপর ভারতে বাণিজ্যিকভাবে পরিষেবা শুরু করা হবে। IN-SPACe-এর চেয়ারম্যান পবন গোয়েঙ্কা স্পষ্ট করেছেন যে Starlink-এর সমস্ত নিয়ন্ত্রক শর্ত পূরণ করা হয়েছে এবং বাকি প্রক্রিয়াগুলি শীঘ্রই সম্পন্ন করা হবে।
কলিং এখন নেটওয়ার্ক ছাড়াই
Starlink-এর প্রযুক্তি আরও একটি বড় সুবিধা নিয়ে আসছে – মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়াই কলিং। অর্থাৎ, যদি আপনি কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে থাকেন এবং আপনার ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকে, তাহলেও আপনি কল করতে পারবেন। এর জন্য স্যাটেলাইট ডিরেক্ট টু ডিভাইস প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। ভবিষ্যতে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও Starlink-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে এমন ফোন তৈরি করতে পারে, যা সরাসরি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যৎকে নতুন দিশা দেবে
Starlink-এর প্রবেশ ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামোর জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে। এটি কেবল দেশকে ডিজিটালভাবে आत्मनिर्भर করবে না, বরং দূর-দূরান্তের অঞ্চলগুলিকে মূল স্রোতে যুক্ত করতে সাহায্য করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য এবং কৃষি-র মতো ক্ষেত্রগুলিতে এর বড় প্রভাব দেখা যেতে পারে।