‘পথে নামুন’, বিজেপি কর্মীদের ডাক শমীকের — পাল্টা তোপ মমতার

‘পথে নামুন’, বিজেপি কর্মীদের ডাক শমীকের — পাল্টা তোপ মমতার

সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তা শমীকের:কলকাতার টানা বৃষ্টিতে শহরের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঠিক এই আবহেই বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি লিখেছেন, দলের কর্মীদের এই দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাঁর কথায়, আমাদের কর্মীবন্ধুরা মানুষের পাশে থেকে এই জলযন্ত্রণা ও দুর্দশার সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন — কলকাতার নাগরিকদের ভরসা দিন।

শাসকদলের প্রতি শমীকের কটাক্ষ

বিজেপি সভাপতির অভিযোগ, সোমবার রাতভর বৃষ্টির পরে মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও জল নামেনি শহরের বহু জায়গা থেকে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতাবাসীর চরম দুর্ভোগের জন্য দায়ী শাসকদলের অব্যবস্থা ও উদাসীনতা। তাঁর দাবি, পুজোর মরশুমে নাগরিকরা সরকারের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার শিকার।

দুর্যোগের মাঝেই রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে

প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়েই আক্রমণে নেমেছে বিজেপি। তবে পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি প্রকৃত সমস্যায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু রাজনীতি করছে। তৃণমূলের দাবি, শাসকদলের কর্মীরা জমা জলে নেমে শহরবাসীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন, অথচ বিরোধীরা ব্যস্ত থেকেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড় তোলায়।

প্রমাণের লড়াই: ছবি বনাম ছবি

শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিম–সহ তৃণমূল নেতাদের জলে দাঁড়ানো ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল। বিপরীতে বিজেপি শিবির থেকে তেমন কোনও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ না হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে— বিরোধীরা সত্যিই কি পথে নামলেন? এক তৃণমূল নেতা কটাক্ষ করে বলেন, বিজেপি সভাপতিকে ফেসবুকে আহ্বান জানাতে হচ্ছে, তা–ও জল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পরে।

বিজেপির পাল্টা সাফাই

বিজেপির যুক্তি স্পষ্ট— মানুষের দুর্ভোগ কমানো সরকারের দায়িত্ব। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “জল জমতেই পারে। কিন্তু তড়িদাহত হয়ে এতগুলি প্রাণ কেন যাবে! গাফিলতি তো রাজ্য সরকারের, বিরোধীদের তো নয়। তাই জবাব তৃণমূলকেই দিতে হবে।” বিজেপির দাবি, তারা মানুষকে সাহায্যের জন্য পথে নেমেছে, তবে মূল দায় রাজ্য প্রশাসনের।

রাজনৈতিক তাৎপর্য ও অন্তর্দ্বন্দ্ব

রাজনৈতিক মহলের মতে, শমীকের এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টই প্রমাণ করে, মঙ্গলবার বিজেপি রাস্তায় ছিল না। এমনকি বঙ্গ–বিজেপির একাংশও বুঝতে পারছে, শুধু সরকারের সমালোচনা করে জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে না। তাই এবার জনগণের পাশে থেকে ছবি–বার্তা তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য।

তৃণমূলের খোঁচা: ‘ঘুম ভেঙেছে বিজেপির’

তৃণমূলের রাজ্য সহ–সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার শমীকের এই ডাককে তীব্র ব্যঙ্গ করে বলেন, চল্লিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, তবে শাসকদলের নেতা–কর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন। বিজেপি ব্যস্ত ছিল ফেসবুক আর টুইটারে। জল নেমে যাওয়ার পরেই তাদের ঘুম ভেঙেছে।

কলকাতার জল–দুর্যোগ মানুষের দুর্ভোগ কতটা বাড়িয়েছে, সেটা নিয়ে বিতর্ক নেই। কিন্তু এই বিপর্যয়কে ঘিরে তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক তরজা ফের নতুন উচ্চতায় পৌঁছল। শমীকের পথে নামার ডাক ও মমতার পাল্টা আক্রমণ— দুই পক্ষের এই দায়–প্রত্যাঘাত রাজনীতির মাঝেই শহরবাসী এখনও খুঁজছে প্রকৃত সহায়তা।

Leave a comment