সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে নার্সিং ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ

সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে নার্সিং ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ

মধ্যপ্রদেশের বিন্ধ্য অঞ্চলে অবস্থিত সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতাল আবারও বিতর্কে জড়িয়েছে। হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে কর্মরত এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিএসসি নার্সিংয়ের ৮০ জন ছাত্রী যৌন হেনস্থা এবং মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। ছাত্রীরা ডাক্তারের কথিত অভদ্র ও অপমানজনক আচরণের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানালে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং হাসপাতালে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

ডাক্তার আশরাফের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

অভিযোগে ছাত্রীরা ইএনটি বিভাগের ডাক্তার আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নার্সিং ছাত্রীদের সঙ্গে আপত্তিকর ও অশালীন আচরণ করছেন। তাদের মতে, ডাক্তারের আচরণ শুধু সংবেদনহীন নয়, বরং অনেক সময় মানসিক নির্যাতনের পরিস্থিতি তৈরি করে। ছাত্রীরা আরও বলেছেন যে ডাক্তার আশরাফের উপস্থিতিতে তারা নিজেদেরকে অনিরাপদ মনে করেন, যার ফলে ক্লিনিক্যাল শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ছাত্রীরা স্পষ্টভাবে লিখেছেন যে এটি শুধুমাত্র অ’নিয়মানুবর্তিতার বিষয় নয়, বরং সরাসরি মানসিক ও আবেগিক নির্যাতনের একটি বিষয়, যা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা হচ্ছিল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক

সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে উদ্ভূত এই ঘটনা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানির প্রশ্ন নয়, বরং এটি সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থার সেই দুর্বলতাকে উন্মোচন করে, যেখানে প্রশিক্ষণার্থী ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও সম্মান আজও উপেক্ষিত হয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে স্বাস্থ্যর মতো গুরুতর ও দায়িত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রশিক্ষণ পরিবেশ তৈরি করা আজও একটি বড় এবং জরুরি চ্যালেঞ্জ।

এসএস মেডিকেল কলেজের ডিন ড. সুনীল আগরওয়াল নিশ্চিত করেছেন যে তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

অতীতেও উঠেছে প্রশ্ন

উল্লেখ্য, এটি সেই ইএনটি ওয়ার্ড যেখানে কয়েক সপ্তাহ আগে এক মহিলা রোগীর নাবালিকা অ্যাটেন্ডেন্ট দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিল, যেখানে একজন ওয়ার্ডবয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবার, নার্সিং ছাত্রীদের সম্মিলিত অভিযোগ হাসপাতালের নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থার উপর পুনরায় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।

ছাত্রীদের বক্তব্য, যখন প্রশিক্ষণের পরিবেশই নিরাপদ না হয়, তখন শেখা এবং সেবা দেওয়া উভয়ই কঠিন হয়ে পড়ে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কলেজ, হাসপাতাল প্রশাসন এবং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি—এই তিনটি স্তরেই এখন নজর রাখা হচ্ছে।

আইন কী বলে

এই মামলার তদন্ত মহিলা কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা আইন, ২০১৩-এর অধীনে করা হচ্ছে। এই আইন কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং এতে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে যে অভিযোগ পাওয়ার পর একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।

শীঘ্রই রিপোর্টের আশা 

সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালের এই ঘটনা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির উপর কালিমা লেপন করেনি, বরং এটি সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সেই দুর্বল দিকটির দিকে ইঙ্গিত করে, যেখানে প্রশিক্ষণরত ছাত্রীরা নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছে না। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে চিকিৎসা-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও একটি নিরাপদ এবং সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা আজও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সকলের দৃষ্টি সেই তদন্ত রিপোর্টের দিকে, যা সাত দিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে। ছাত্রীদের দাবি, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রশিক্ষণার্থী এই ধরনের নির্যাতনের শিকার না হয়।

 

Leave a comment