ঝালাওয়াড়ে ছাদ ধসে ৭ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু: শোকের ছায়া

ঝালাওয়াড়ে ছাদ ধসে ৭ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু: শোকের ছায়া

ঝালাওয়াড়: ঝালাওয়াড়ের পিপলোদি গ্রামে স্কুলের ছাদ ধসে ৭ শিশুর মৃত্যু, বহু আহত। পুরনো ভবন ও প্রশাসনিক গাফিলতিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে। গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

রাজস্থানের ঝালাওয়াড় জেলা থেকে একটি হৃদয়বিদারক খবর এসেছে, যেখানে পিপলোদি গ্রামে অবস্থিত একটি সরকারি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ধসে ৭ জন নিরীহ শিশু মারা গেছে। ২৫ জুলাই সকালে শিশুরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করছিল, তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে। আকস্মিকভাবে ছাদ ভেঙে পড়লে শ্রেণিকক্ষে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় আরও অনেক ছাত্র আহত হয়েছে, তাদের ঝালাওয়াড় জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কী ঘটেছিল দুর্ঘটনায়?

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সকাল প্রায় ১০টায় ক্লাসের ভেতরে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করছিল, তখনই স্কুলের পুরনো ছাদটি আচমকা ভেঙে পড়ে। কিছু শিশু ঘটনাস্থলেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যায়। স্থানীয় গ্রামবাসীরা তৎক্ষণাৎ উদ্ধার কাজ শুরু করে এবং পুলিশ-প্রশাসনকে খবর দেয়। উদ্ধারকারী দল, দমকল বিভাগ এবং মেডিকেল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার করার অভিযান শুরু করে।

৭ জন নিরীহ শিশুর মৃত্যু, অনেকে গুরুতর আহত

এখন পর্যন্ত ৭ জন শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়, বাকি চারজন হাসপাতালে মারা যায়। দুর্ঘটনায় আহত ছাত্রদের সংখ্যা ১০ জনের বেশি বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা ক্রমাগত চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং আহতদের সম্ভাব্য সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মার বিবৃতি: ‘এই দুর্ঘটনা হৃদয়বিদারক’

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট 'এক্স' (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন – 'ঝালাওয়াড়ের পিপলোদি গ্রামের বিদ্যালয়ের ছাদ ধসের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমার সমবেদনা শোকাহত পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। আহতদের সম্ভাব্য সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' মুখ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে দ্রুত ত্রাণ কাজ নিশ্চিত করতে এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা: ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, তদন্তের নির্দেশ

রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ার এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন যে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আছে। তিনি ঘোষণা করেছেন যে – 'সরকারের পক্ষ থেকে সকল আহত ছাত্রের চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে। পাশাপাশি ছাদ ধসের কারণ অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' মন্ত্রী জানান, শিক্ষা বিভাগ এবং পূর্ত বিভাগের (PWD) ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং স্কুলের বিল্ডিংয়ের প্রযুক্তিগত পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি এতে কোনো অবহেলা বা নির্মাণে ত্রুটি পাওয়া যায়, তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুরনো এবং জরাজীর্ণ ভবন দুর্ঘটনার কারণ?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুল ভবনটি অনেক পুরনো এবং দুর্বল হয়ে পড়েছিল। গ্রামবাসীরা এবং অভিভাবকরা বহুবার অভিযোগ করেছিলেন যে ছাদের অবস্থা খারাপ এবং যে কোনো দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্ষার কারণে ছাদ চুয়ানো এবং জল পড়ার খবরও পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু কোনো মেরামত করা হয়নি। এখন প্রশ্ন উঠছে, অভিযোগ আগে থেকে থাকলে স্কুল প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর সময় থাকতে ব্যবস্থা নেয়নি কেন? এই প্রশাসনিক গাফিলতি এখন ৭ জন নিরীহ প্রাণের মূল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নি innocent শিশুদের স্বপ্নে চাপা পড়ল ধ্বংসস্তূপ, গ্রামে শোকের ছায়া

দুর্ঘটনার পর পিপলোদি গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যে বাড়িতে সকালে শিশুদের স্কুলে পাঠানো হয়েছিল, এখন সেখানে কান্নার রোল শোনা যাচ্ছে। স্বজনেরা স্কুল চত্বরে বিলাপ করতে দেখা যায়। এক মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, 'ছেলে বলে গিয়েছিল - মা, তাড়াতাড়ি আসব, আজ অঙ্কের পরীক্ষা আছে। ও আর কখনো আসবে না।'

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং দাবি

ঘটনার পর বিরোধীরাও সরকারকে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট টুইট করে লিখেছেন – 'ঝালাওয়াড়ের ঘটনা পুরো রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটা সরকারের গাফিলতির ফল। শিক্ষা ব্যবস্থার হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।' তিনি মৃতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Leave a comment